Site icon Jamuna Television

পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন; কারাগারে স্বামী, পলাতক কথিত প্রেমিক

রংপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন মাইনুদ্দিন (৩৮)।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর:

পরকীয়ার জেরে ডেকে এনে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী আয়েশা আখতারকে (৩৪) কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ করে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মাইনুদ্দিন (৩৮) নামে এক ব্যক্তি।

খবর পেয়ে শুক্রবার (৩ মে) সকালে রংপুরের পীরগাছার অন্নদানগরের খামার নয়াবাড়ি এলাকা থেকে আয়েশা আখতারের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে, এ ঘটনায় নিহতের ভাইয়ের করা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের দায় স্বীকার করেছে আয়েশা আখতারের ঘাতক স্বামী মাইনুদ্দিন। আর, এ ঘটনা জানাজানির পর থেকেই পলাতক কথিত সেই পরকীয়া প্রেমিক।

রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম পলাশ জানান, শুক্রবার সকাল আনুমানিক সাতটায় মাইনুদ্দিন (৩৮) নামের এক ব্যক্তি পীরগাছা থানায় এসে আত্মসমর্পন করেন। তার দাবি, তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায়। ২০ বছর আগে ঢাকায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সে সময়ই পীরগাছার অন্নদানগর ইউনিয়নের খামার নয়াটারী এলাকায় আজিজ দোয়ারীর মেয়ে আয়েশাকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর টাকা জমিয়ে শ্বশুরবাড়ি এলাকাতেই জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করতে শুরু করেন তারা। জমি এবং পুরো বাড়ি স্ত্রী আয়েশাকে লিখে দিয়েছিলেন বলে জানান মাইনুদ্দিন।

কিন্তু, তার স্ত্রী আয়েশা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতেন বলে জানান মাইনুদ্দিন। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার সালিশ বৈঠকও করেন। কিন্তু আয়েশা কিছুতেই পরকীয়া থেকে সরে আসছিলেন না।

সম্প্রতি আয়েশা পার্শ্ববতী জগজীবন মোমিনবাজার গ্রামের ফারুক নামের এক ব্যক্তির সাথে আবারও পরকীয়ায় জড়ান। এ নিয়েও একাধিকবার সালিশ হলেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান মাইনুদ্দিন।

মাইনুদ্দিন স্বীকারোক্তিতে জানান যে, কিছুদিন আগে স্ত্রী ও সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে থাকেন। গত ২৯ মে ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। কিন্তু আয়েশা বাড়িতে এসেই আবারও ফারুকের সাথে প্রকাশ্যে পরকীয়ায় জড়ান।

পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুদ্দীনের স্বীকারোক্তি উদ্ধৃত করে আরও বলেন, বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে স্ত্রী আয়েশা বেগম আবারও ফারুকের সাথে মোবাইল ফোনে যৌন উত্তেজনামূলক কথা বলেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ বাধে। এই বিরোধ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ স্বামী মাইনুদিন স্ত্রী আয়েশাকে পাশে থাকা শাবল দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যপুরি কোপালে ঘটনাস্থলেই মারা যান আয়েশা। এরপর, সকাল ৭ টায় থানায় এসে সে স্ত্রী হত্যার কথা দাবি করে আত্মসমর্পন করেন মাইনুদ্দিন।

সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম পলাশ আরও জানান, সব কিছু শুনে মাইনুদ্দিনকে নিয়ে সকাল ১০ টার দিকে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে তার নিজের শোবার ঘর থেকে স্ত্রী আয়েশার রক্তাত্ত মরদেহ, রক্তমাখা জামা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবলটি উদ্ধার করি। পরে আলামত সংগ্রহের জন্য সিআইডির সহায়তাও নেয়া হয়। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর আয়েশার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, মাইনুদ্দিনের দাবি; স্ত্রীকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। সে কারণেই স্ত্রী যাতে ভাল হয়ে সঠিকভাবে সংসার করেন সেজন্য জমিজমা, বাড়িঘর তার নামে লিখেও দিয়েছিলেন। কিন্তু, আয়েশা কিছুতেই শোধরাচ্ছিলেন না। একের পর এক পরকীয়ায় জড়িয়ে মাইনুদ্দিনের সম্মানহানী করছিলেন বলে দাবি তার স্বামীর।

মাইনুদ্দিন তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, আমি এলাকায় মুখ দেখাতে পারছিলাম না। তারপরেও তাকে শোধরানোর চেষ্টা করেছিলাম। তারপরেও সে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পরকীয়া করছিল। ক্ষোভে তাকে হত্যা করেছি।

পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন আরও জানান, ক্ষোভ যতই থাকুক। তাকে এভাবে হত্যা করার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রয়োজনে সে স্ত্রীর সাথে সেপারেশনে যেতো পারতো। কিন্তু সেটা না করে যে কাজটা করলো তাতে দুটি বাচ্চার জীবন অনিশ্চয়তায় পড়লো। এখন মা নাই, বাবা জেলে । তাদের কি হবে? ওই দম্পত্তির ১৩ ও ৭ বছর বয়সী দুটি সন্তান আছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, ঘটনার পরপরই পলাতক কথিত সেই পরকীয়া প্রেমিক ফারুক।

পীরগাছার থানার ওসি সরেষ চন্দ্র জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই শোরমান আলী বাদী হয়ে মাইনুদ্দিনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অভিযুক্তকে রংপুরের পীরগাছা আমলী আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার ও কারণ ব্যাখ্যা করেন অভিযুক্ত মাইনুদ্দিন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

/এসএইচ

Exit mobile version