Site icon Jamuna Television

রোগ-জীবানুর কাছে হেরে যাবে মানুষ?

ফুরিয়ে আসছে কার্যকর এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা। ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে রোগ-জীবানু। বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে মানব সভ্যতা। এমনই অশনী সংকেত দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্থাটির এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, জটিল রোগ আর ইনফেকশন প্রতিরোধে নিত্যনতুন এন্টিবায়োটিক তৈরির গবেষণায় গতি নেই। তার চেয়ে ঢের বেশি গতি এন্টিবায়োটিক সহনীয় হয়ে উঠছে ক্ষতিকর ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মে মাস পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৫১টি নতুন এন্টিবায়োটিক ও ১১টা প্রাকৃতিক ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণা চলছে। আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাটা বড় মনে হলেও, নিত্য-নতুন দেখা দেয়া জীবনু মোকাবেলায় এগুলো মোটেই যথেষ্ট নয়।

এই ৫১টি এন্টিবায়োটিকের মধ্যে ৩৩টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। এর মধ্যেও কিন্তু আছে। ৩৩টি এন্টিবায়োটিকের ২৫টি-ই আবার পুরোনো এন্টিবায়োটিকের আপডেট ভার্সন। অর্থাৎ এগুলো খুব বেশিদিন কার্যকর হবে না। জীবানুরা অল্পদিনেই এসব এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে। একেবারে নতুন এন্টিবায়োটিক ধরতে গেলে বিশ্বে মাত্র ৮টাই তৈরি হচ্ছে।

গবেষণা রিপোর্টটির প্রণেতা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিনিয়র উপদেষ্টা পিটার বেয়ার বলেন, কোম্পানিগুলো কেন নতুন ওষুধ তৈরি করে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন; তবে নতুন ওষুধ হলেই যে তা আগেরটির চেয়ে উন্নত ও অধিক কার্যকর হবে, তেমনটা মনে করার কোন কারণ নেই।

এ  প্রসঙ্গে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যক্ষা রোগের কথা। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হয় যক্ষার জীবানুর কারণে। এ রোগোর চিকিৎসায় অন্তত ৩ ধরণের এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। অথচ গবেষণাগার ও ফার্মেসিতে মিলিয়ে পৃথিবীতে যক্ষার এন্টিবায়োটিক আছে মাত্র ৭ রকমের। খুব শিগগিরই হয়তো এই রোগ মোকাবেলায় ওষুধ ফুরিয়ে আসবে। আর সেদিনটা হবে খুবই ভয়াবহ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মুখে খাওয়ার এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে এসেছে। অথচ, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষের কাছে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকরভাবে পৌছে দেয়ার জন্য এ ধরণের ওষুধেই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো। সংস্থাটির মতে, এন্টিবায়োটিক গবেষণায় এমন ঘাটতি গোটা বিশ্বকে একটা জরুরি অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তবে নিত্য নতুন এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবনেই রোগ-জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পেরে ওঠা যাবে না। এর জন্য মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরী। চিকিৎসকের পরামর্শ এন্টিবায়োটিক সেবন এবং প্রেসিক্রিপশনের নির্দেশনা অনুসারে ওষুধ না খাওয়ার কারণেও অনেকের শরীরে আর এন্টিবায়োটিক কাজ করে না।

সংস্থাটির মতে, দ্রুত এন্টিবায়োটিক গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি না হলে, এমন এক সময় ফিরে আসবে যখন মানুষ সামান্য ধরনের ইনফেকশনকে ভয় পেত আর ছোট্ট সার্জারির জন্য জীবন ঝুঁকিতে পড়তো।

/কিউএস

Exit mobile version