গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক রেজওয়ান।
দশম শ্রেণির গণ্ডি পেরোনো এক তরুণের প্রতারণায় উদ্বেগে ছিলেন সরকারের সচিবরা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের ভুয়া ফেসবুক আইডি বানিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল সে। এরপর টাকা হাতিয়ে নিতো চাকরি দেয়ার নাম করে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তাদের কাছেও চাকরিতে পদোন্নতি করিয়ে দেয়াসহ নানা সুবিধা দিতে যোগাযোগ করতো। অবশেষে শিক্ষা সচিবের করা মামলায় অভিযুক্ত সেই তরুণ রেজওয়ানকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
রেজওয়ানুল হকের বয়স ২১। সে এসএসসি পাশ। তবে এই বয়সেই তার বিরুদ্ধে আছে চারটি মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ। আর সেই প্রতারণার অভিযোগগুলোও বেশ অভিনব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু বকর সিদ্দিকের নামে ফেসবুকে একটি আইডি খোলেন রেজওয়ান। প্রোফাইলে থাকা বিভিন্ন কার্যকলাপ দেখে মনে হওয়ার সুযোগ কম যে, এটা অন্য কারো প্রোফাইল। এই প্রোফাইল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, বিভিন্ন এলাকার শিক্ষক এবং চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হতো। এরপর চাকরি দেয়ার নাম করে চাওয়া হতো টাকা। আর সেই টাকা চাওয়ার ফোনালাপও পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। জানা যায়, শিক্ষাসচিবের পিএসের পরিচয় দিয়ে তার গলা নকল করে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতির দিতো রেজওয়ান, এবং হাতিয়ে নিতো টাকা।

কয়েকজনের কাছ থেকে লাখ বিশেক টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর বিস্তর অভিযোগ আসতে থাকে সচিবালয়ে। সবশেষ, প্রতারণার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শিক্ষাসচিবের স্টাফ অফিসার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মামলার বাদী মঞ্জুর আলম বলেন, ফেক আইডিতে আমাদের দফতর, অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সাথে চ্যাটিংয়ের খবর পাওয়া যায়। যখন আর্থিক লেনদেনের কথা জানতে পারি তখন জিডি করি। তারপর আমরা মামলা করি।
রংপুর থেকে প্রতারণায় অভিযুক্ত রেজওয়ানকে আটক করে পুলিশ জানিয়েছে, শুধু চাকরি পাইয়ে দেয়া নয়, রেজাল্ট পরিবর্তন, রোগীর চিকিৎসায় ফান্ডের নামেও টাকা আত্মসাতে জড়িত ছিল সে। পড়াশোনায় অল্প শিক্ষিত হলেও ডিজিটাল প্রতারণায় হাতপাকা ছিল রেজওয়ানের।
ডিএমপির ডিবি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার তারেক বিন রশিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সরকারের একটি বড় মন্ত্রণালয়। এর বিস্তার দেশজুড়ে। শিক্ষকতার চাকরি বা বদলি, এসব বিষয়ে তদবির করা যায় কিনা বা, এরকম সুযোগ সুবিধা দেয়া যায় কিনা এমন লোকদের সন্ধান করতো সে। এসব পর্যবেক্ষণ করে সে বুঝতে পারলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছাতে পারলে সে অধিক লাভবান হবে।
প্রতারকদের প্রলোভনে যারা লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল অথবা, পদোন্নতি বা চাকরিকালীন সুবিধা নিতে যেসব কর্মকর্কতা-কর্মচারি যোগাযোগ করেছিল তাদের নিয়েও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
/এম ই
Leave a reply