Site icon Jamuna Television

ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হয় যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, তা সংরক্ষিত ছিল তীব্র তাপে!

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখতে হয় অন্ধকার আর ঠান্ডা জায়গায়। অথচ বিএম কনটেইনার ডিপোতে তা রাখা হয়েছিল তীব্র সূর্যের তাপে। রসায়নবিদদের মতে, এই কেমিক্যালে পানি দিলে বিস্ফোরণ হবে; আর হয়েছেও তাই। গায়ে গায়ে লাগানো কনটেইনারগুলোতে ছিল বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক আর খাদ্যপণ্যের মজুদ। এতে বেড়েছে আগুনের ভয়াবহতা। এরই মাঝে হাটহাজারীর লোকালয়ে গড়া কারখানায় চলছে কেমিক্যাল উৎপাদন। এই ঘটনায় হতাশ, নির্বাক ও বিস্মিত বিস্ফোরক পরিদফতর; তাদেরও নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ।

২৬ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বিএম কন্টেইনার ডিপো। বিস্ফোরণ আর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব। টানা তিনদিন এখানে জ্বলেছে আগুন। বিস্ফোরণে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সব কনটেইনার। ডিপোর ১০ অপারেটরের মধ্যে বেঁচে যাওয়া ৩ জনের ১ জন নাঈমুর রহমান। তিনি জানালেন, এখনো কীভাবে পড়ে আছে কেমিক্যালের ড্রামগুলো। নাঈমুর বলেন, কেমিক্যাল বের হচ্ছে আর গ্যালনগুলো ফুলে আছে। কাছে গেলে আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। আমরা খুব সাবধানে কাজ করছি।

৩৩টি কনটেইনারে ১০ দিন রাখা ছিল ৮৫০ টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। ওই ১০ দিন সীতাকুণ্ডের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ এ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখতে হয় অন্ধকার আর ঠান্ডা জায়গায়। রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, সূর্যের আলো থাকা যাবে না। অন্ধকারে রাখতে হবে, সেখানে তাপ থাকবে না। কারণ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সামান্য তাপেই উত্তপ্ত হয়। সব আগুন কিন্তু পানি দিয়ে নেভে না। আর এখানে সবার আগে পানি ব্যবহার করা হয়েছে।

আরও বলা আছে, এ ধরনের রাসায়নিকের আশপাশের ১৭ বর্গফুটের মধ্যে রাখা যাবে না কোনো দাহ্য পদার্থ। অথচ পুড়ে যাওয়া ডিপোর ৪ হাজার কনটেইনারে ছিল তৈরি পোশাক আর খাদ্যপণ্যের মজুদ। বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মূল জায়গাটা আলাদা থাকতে হবে। মূল জায়গা সংলগ্ন কোনোকিছুই থাকতে পারবে না। আর খাদ্যপণ্য রাখাও অসম্ভব।

আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদন হচ্ছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, সেখানে গণমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ।

হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়ির পাহাড়ি লোকালয়ের ভেতর আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সেই উৎপাদন হয় দাহ্য এই কেমিক্যাল। দুর্ঘটনার পরও বন্ধ হয়নি এর উৎপাদন। যদিও কারখানায় যাওয়া আসার মধ্যেই আছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। শুধু প্রবেশ নিষেধ গণমাধ্যমের। সেখান থেকে জানানো হয়, যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, মিডিয়ার সামনে মুখ খুলবেন না তারা। সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণের ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে শব্দ ও কম্পন। এরপর কারখানাটিতে এসে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে যায় এলাকাবাসী। কিন্তু তারপরও ফের শুরু হয়েছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের উৎপাদন। বিস্ফোরক পরিদফতর বলছে, কাউকে এই কেমিক্যাল উৎপাদনের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তবু এসবই চলছে। কারখানা থেকেও কোনোকিছু বলতে বারণ।

/এম ই

Exit mobile version