Site icon Jamuna Television

পদ্মা সেতু: আওয়ামী লীগের হাতেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন

মুস্তাকিম আহমেদ সানি:

বাংলাদেশের জন্মের সাথে যে সংগঠনটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তার নাম পৃথিবীব্যাপী সবাই জানে, সেই সোনালি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই উন্মোচিত হতে যাচ্ছে আরেক নতুন দিগন্তের দুয়ার। পদ্মা সেতু, নাম শুনলে অনেকেই ভাবতে পারেন একটা সেতুই তো মাত্র, এ নিয়ে এতো হৈ-চৈয়ের কী আছে! কিন্তু এই সেতু যে ইট-পাথরের গঠনের চেয়েও অনেক বেশি সম্মানের, আত্মমর্যাদার সেটা আজ পৃথিবীর মানুষকে জানানোর সময়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন, কে এম দাস লেনের ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় একটি নতুন রাজনৈতিক দল, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী (মুসলিম) লীগ’। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর, আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি প্রত্যাহারের সুপারিশ পেশ করলে, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ততদিনে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলায় সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশব্যাপী সাংগঠনিক ভিত্তি নির্মাণ করতে গিয়ে নিজের রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে এই দলের পোস্টার বয়ে পরিণত হন তরুন নেতা শেখ মুজিব।

তারপরের ইতিহাসটা গৌরবের, আনন্দ-বেদনার, সংকট, সংগ্রাম ও অর্জনের। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে পূর্ব পাকিস্তান হতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে। এই দলটির দীর্ঘ ২২ বছরের সংগ্রামের ফসল পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয় আর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখে এক নেতার নেতৃত্বে কোটিপ্রাণ কীভাবে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা।

মাঝখানের সময়টা চরম সংগ্রামের, প্রবল ঝড়েও শক্ত হাতে হাল ধরে থাকা নির্ভীক নাবিক শেখ মুজিব ছিলেন বলেই সারা বাংলা জুড়ে ‘নৌকা মার্কা’র ওপর আস্থা রাখে জনগণ।

‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, স্বৈরাচার আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ‘৬২ ও ’৬৪ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানসহ সকল আন্দোলনকে সংগঠিত করে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গণমানুষের প্রাণের দলে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ। যার পরিপূর্ণতা আসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাঙালি জাতি। ৩০ লক্ষ শহিদের প্রাণ ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময় অর্জিত হয় লাল সবুজের পতাকা, স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র।

স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুনর্বিনির্মাণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়কল্প। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। দুর্নীতির গোড়ায় কঠোর আঘাত হানতে চেয়েছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যখন দেশ বিনির্মাণে নিমগ্ন, অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। বাঙালি জাতির বেদনার উপাখ্যান রচিত হয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে, যেখান থেকে তিনি সংগঠিত করেছিলেন আওয়ামী লীগকে, সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার ছিল যেই বাড়িটি সেখানেই ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নেয় বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ককে। ওই সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর চালানো হয় সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার। এর মাঝে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়, নেতৃত্বের এক গভীর সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছে অপপ্রচার চালাতে থাকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যা গোয়েবলসীয় মিথ্যাকেও হার মানায়। দলীয় নেতা-কর্মীরা গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হয়।

এই অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জীবনের মায়া উপেক্ষা করে দল ও দেশতে বাঁচাতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও স্বৈরাচার বাহিনী তাঁকেও হত্যার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বারবার আক্রমণ করা হয় শেখ হাসিনার ওপর, কিন্তু শান্ত নির্ভীক নাবিকের মত সকল ঘাত-প্রত্যাঘাত সহ্য করে তিনি চষে বেড়ান সারাদেশে, আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব যেমন দিয়েছেন তেমনি সংগঠনকেও করেছেন মজবুত, এই ৯ বছররের মধ্যে প্রত্যেক বছরেই আটক ও বন্দি করা হয় শেখ হাসিনাকে, কিন্তু পিতার মতো তিনিও মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামকে জীবনের ব্রত করে নেন।

১৯৮১ থেকে ২০২১, শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন ৪০ বছর। এই চার দশকে তিনি সাধারণ একজন আটপৌরে বাঙালি নারী থেকে পরিণত হয়েছেন জননেত্রীতে, বাংলার মানুষের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর কর্মময় কণ্টকাকীর্ণ এই পথ চলায় এসেছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির আঘাত, স্বৈরাচারের অত্যাচার এবং দেশবিরোধী শক্তির নিপীড়ন ও জুলুম। ইস্পাতদৃঢ় মনোবল নিয়ে স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে তিনি নিজে যেমন আজ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী সম্পন্ন নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন তেমনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেও করেছেন সমৃদ্ধ। সেই সমৃদ্ধির পালকের সর্বশ্রেষ্ঠ সংকলন পদ্মা সেতু, আমাদের পদ্মা সেতু!

আর মাত্র দুই দিন! এরপরই লাখো মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত হবে পদ্মাসেতু, যারা ষড়যন্ত্র করে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারাও এই সেতু ব্যবহার করবেন নির্বিকারে। বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব অর্থায়নে গড়া এই সেতুর মুল কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য হার না মানা স্পৃহার কাছে হেরে গেলো শত ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ নামক দেশটির অধিনায়ক শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন! স্যালুট ক্যাপ্টেন!

লেখক: প্রকৌশলী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য।

Exit mobile version