Site icon Jamuna Television

বরফের মধ্যে ‘ছোপ ছোপ রক্তই’ এখন পরিবেশবিজ্ঞানীদের মাথাব্যথার কারণ

সাদা বরফের মধ্যে ছোপ ছোপ রক্তের মতো দাগ, বিজ্ঞানীরা এই প্রাকৃতিক অবস্থার নাম দিয়েছেন রক্তাক্ত তুষার। মূলত অ্যালগে বা এক ধরনের শ্যাওলার জন্যই এমনটি হয়। এখন এটিই হয়ে উঠেছে পরিবেশবিজ্ঞানীদের মাথাব্যথার কারণ। গবেষণা বলছে, অ্যালপাইন বা মেরু অঞ্চলে বরফ গলাকে তরান্বিত করে অতি ক্ষুদ্র এই শ্যাওলাগুলো।

সুমদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় ফ্রান্সের আল্পস অঞ্চলের লা ব্রেভেন্ত পর্বত। বরফে ঢাকা পাহাড়ের বুকে জমাট ছোপ ছোপ রক্ত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাইক্রোস্কোপিক এক ধরনের অ্যালগে বা শ্যাওলার কারণে বরফগুলো লালচে হয়ে যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেমিদোমোনাস নিভালিস হলেও, স্নো ব্লাড নামেই বেশি পরিচিত।

শ্যাওলাগুলোর স্বাভাবিক রং সবুজ। কিন্তু তীব্র সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচতে এগুলোর কোষে তৈরি হয় ক্লোরোপ্লাস্ট। এর ফলে তৈরি লাল ক্যারোটিনের স্তর বাধা দেয় সূর্যালোক প্রতিফলনে। হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রাতেও দিব্যি বেঁচে থাকে শ্যাওলাগুলো। গবেষক এরিক মার্কেল বলছেন, বরফে থাকার সময় এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ জড়ো হয় এদের কোষে। যা সূর্যের তীব্রতা থেকে রক্ষা করে। অনেকটা সানস্ক্রিনের মতো। এগুলোর আসল রং সবুজই তবে লাল রংকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের আড়াল করে রাখে তারা।

গ্রীষ্মকালে অনুকূল পরিবেশে ব্যাপকভাবে বংশবৃদ্ধি করে এই স্নো অ্যালগে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এগুলো নিজেদের সুরক্ষার জন্যই সূর্যের তাপ ধরে রাখে। এর ফলে দ্রুত বরফ গলে যায়। গবেষক অ্যালবার্তো আমাতো বলেন, অ্যালগে নিয়ে এখনও আমাদের কাছে খুব সামান্য তথ্যই আছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে স্নো ব্লাড বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ এর সাথে বৈশ্বিক উষ্ণতা বা জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। অ্যালগের পরিমাণ যত বেশি, বরফও তত দ্রুত গলছে বলেই আমাদের ধারণা।

দীর্ঘদিন ধরেই রহস্য হয়ে ছিল এই রক্তাক্ত তুষার। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে অ্যারিস্টটল প্রথম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন স্নো অ্যালগের। এরপর খুব বেশি গবেষণা হয়নি এটি নিয়ে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন সংকট বিজ্ঞানীদের নতুন করে স্নো ব্লাড নিয়ে ভাবাচ্ছে।

/এডব্লিউ

Exit mobile version