Site icon Jamuna Television

চলে গেলেন তরুণ মজুমদার

বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার ( ১৯৩১-২০২২)

বলেছিলেন, দ্রুত কাজে ফিরবেন। বলেছিলেন, এখনও অনেক সিনেমা করা বাকি। বলেছিলেন, হাসপাতালে তাকে বেশি দিন রাখা যাবে না। কিন্তু কোনো কথাই রাখলেন না বাংলা সিনেমার অন্যতম দিকপাল তরুণ মজুমদার (৯১)।

রোববার (৪ জুলাই) সকালে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তী এ চলচ্চিত্র পরিচালক।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে, বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্মেছিলেন কিংবদন্তী পরিচালক তরুণ মজুমদার। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কেমিস্ট্রির ছাত্র হলেও সিনেমা তৈরির ঝোঁক ছিল জীবনের প্রথম থেকেই।

যে সময় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের মতো পরিচালকরা সিনেমার জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সে সময় বড়পর্দায় পারিবারিক কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন তরুণ মজুমদার। শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সাথে মিলে তৈরি করেন ‘যাত্রিক’ টিম। এ তিন পরিচালকের প্রথম সিনেমা ‘চাওয়া পাওয়া’। সে সময়কার দারুণ হিট এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক কিংবদন্তী জুটি উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন।

পরবর্তীতে ‘যাত্রিক’ থেকে বেরিয়ে যান তিনি। নিজের পরিচালনায় তৈরি করেন ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘চাঁদের বাড়ি’র মতো সিনেমা। সাহিত্যপ্রেমী তরুণ মজুমদার সিনেমা করতেন বনফুল, বিমল কর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকের গল্প নিয়ে। তার সিনেমায় নিয়মিত শোনা গেছে রবি ঠাকুরের সুরও।

স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তরুণ মজুমদার। ঝুঁলিতে আছে দেশ-বিদেশের খ্যাতি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও পদ্মশ্রী সম্মান। সমসাময়িক অন্যান্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ এর মতো পরিচালক-সমালোচকদের বিপুল সাড়া না পেলেও নিয়মিতভাবে বক্স অফিস হিট সিনেমা নির্মাণ করে গেছেন। তাপস পালের মতো বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীকে তিনি তুলে এনেছিলেন সিনেমার জগতে।

গত ২২ বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তরুণ মজুমদার। কিন্তু এর মধ্যেও থেমে থাকেনি তার কাজ। শারীরিক সমস্যাকে সামলে একের পর এক সিনেমা তৈরি করে গেছেন বর্ষীয়ান এ পরিচালক। চলতি বছর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে।

/এসএইচ

Exit mobile version