Site icon Jamuna Television

নড়াইলের লাঞ্ছিত অধ্যক্ষকে ফুলের মালা দিয়ে বরণের প্রস্তুতি

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

নড়াইল প্রতিনিধি:

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার ২৮ দিন পর রোববার (১৭ জুলাই) থেকে কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কলেজ খোলার পর তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত বুধবার (১৩ জুলাই) বিকেলে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় রোববার (১৭ জুলাই) কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১৮ জুন কলেজে সৃষ্ট ঘটনার পরদিন থেকে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ঈদুল আযহাসহ অন্যান্য ছুটিও ছিল।

এদিকে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস অন্তরালে আছেন। এখনও বাড়িতে থাকছেন না তিনি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে গিয়েও তার দেখা মেলেনি। তবে তার মা বনলতা বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলেকে (স্বপন বিশ্বাস) জুতার মালা পরিয়ে যেভাবে অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে, তাতে সবাই লজ্জিত। এ ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে। আমার ছেলে কলেজে গেলে তাকে সসম্মানে তার প্রাপ্ত মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। ভালোবাসা ও মর্যাদা দিয়ে ফুলের মালায় বরণ করে নিলেই কলেজে যোগদান করবে সে। এটাই আমার চাওয়া।

তিনি আরও বলেন, আমরা মানসিকভাবে অনেক দুর্বল অবস্থায় আছি। তাই সামাজিকভাবে চলাফেরা করতে কষ্ট হয়।

অন্যদিকে, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, অধ্যক্ষকে রোববারই কলেজে যোগদান করতে অনুরোধ করেছি। আমরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে প্রস্তুত আছি।

এ ব্যাপারে বিছালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, কলেজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে অনেকদিন কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। রোববার কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার স্যারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, রোববার থেকে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভারতের বির্তকিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখে-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসে রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও ওই পোস্ট মোছেননি রাহুল।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ জনতা ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।

গত ২৭ জুন এ ঘটনায় ১৭০ জনের নামে মামলা দায়েরের পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সদর থানার ওসি শওকত কবির ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিনকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত পাঁচজন রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না।

/এসএইচ

Exit mobile version