
বেনাপোল প্রতিনিধি:
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে শতাধিক পাসপোর্ট-যাত্রীর ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনায় পোর্ট থানা পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। শুক্রবার ভোরে আটক জসিম উদ্দীন (৪২) গ্রীন লাইন পরিবহনের বেনাপোল চেকপোস্ট কাউন্টারের ম্যানেজার এবং শনিবার (১৬ জুলাই) একই পরিবহন স্টাফ মোহনকে আটক করে যশোর আদালতে প্রেরণ করে কাস্টমস পুলিশ। ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনাটি তদন্ত করতে কাস্টমসের যুগ্ন কমিশনার আ. রশিদ মিয়াকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, বৃহস্পতিবার ভ্রমণ করের জাল রশিদসহ ৪ জনকে শনাক্ত করেন কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন। তবে ওই চার যুবক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে নাজমুল হোসেন রাতেই ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বেনাপোল পোর্ট থানায়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভ্রমণ কর জালিয়াতির মামলার পলাতক অন্যান্য আসামিরা হলেন, হানিফ পরিবহনের বেনাপোল শাখা অফিসের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান আলী, বড় আঁচড়া গ্রামের মিলন খান, সাদিপুর গ্রামের ইমরান হোসেন, শামীম হোসেন, বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্টের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন ও মনিরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জন।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ জানায়, কাস্টম কমিশনারের নির্দেশে গোপন সংবাদ পেয়ে কাস্টমসের একটি টিম বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক কাস্টমস চেকপোস্ট বহির্গমণ স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স রশিদ যাচাই করলে বেশ কয়েকটি রশিদ জাল প্রমাণিত হয়।
পরে কর্মকর্তারা গ্রীন লাইন পরিবহনের ১৩ জন, হানিফ পরিবহনের ৮ জন, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ৭ জন যাত্রীর ট্রাভেল ট্যাক্স রশিদ পরীক্ষা করে দেখে, সেগুলোও ভুয়া। যাত্রীরা জানান, গ্রীন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন, অফিস পিয়ন মোহন মিয়া এবং তাদের অফিস স্টাফরা টাকা নিয়ে এই রশিদ দিয়েছেন তাদের।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৮ যাত্রী জানান, পরিবহনের ম্যানেজর নজরুল, অফিস পিয়ন মিলন খান এবং তাদের স্টাফরা জাল ট্রাভেল ট্যাক্স রশিদগলো দিয়েছেন। পুলিশ আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে করলে তারাও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
বাদী হয়ে মামলাটি করেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এফ এম আতিকুর রহমান। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট যাত্রীদের ভ্রমণ কর ৫০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে আসছিল চক্রটি। বিপুল এই রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা তদন্ত করলে আরও বড় বড় ঘটনা ধরা পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
বেনাপোল চেকপোস্টের কম্পিউটারের দোকান, মোবাইলের দোকান ও ফটোকপিসহ বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজের দোকানে এসব জাল ভ্রমণ কর ও জাল করোনা সার্টিফিকেট তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এতদিন জালিয়াতি করে গেলেও এবার নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পুলিশ ও কাস্টমসের যৌথ অভিযানে চেকপোস্টে একটি কম্পিউটারের দোকানে জাল ট্রেজারি পূরণকৃত চালান ফরম ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী জব্দ করা হয়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ন কমিশনার আ. রশিদ মিয়া জানান, সরকারের বিদেশ ভ্রমণ কর জালিয়াতির সাথে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। পূর্বে এ ধরনের জালিয়াতি করে যারা ভ্রমণ কর জাল করেছেন, তাদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করা হবে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভুঁইয়া জানান, কাস্টমসের করা মামলায় ইতোমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা এখনও পলাতক। তাদের আটকের জন্য পুলিশি অভিযান চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
/এডব্লিউ



Leave a reply