Site icon Jamuna Television

রাজাপাকসে পরিবারের পতনের পর কে হাল ধরছেন শ্রীলঙ্কার?

নতুন নেতৃত্ব নিয়ে শ্রীলঙ্কার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

কেমন হবে শ্রীলঙ্কার নতুন সরকার কিংবা রাজাপাকসে পরিবারের পতনের পর কে হাল ধরছেন; তা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে। লঙ্কানরা বলছেন, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম, এমন নেতৃত্ব আসুক। সেইসাথে তাদের চাওয়া, দ্রুত অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান। অন্যদিকে, স্বৈরশাসন আর পরিবারতন্ত্র থেকে শ্রীলঙ্কাকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিরোধী দলীয় প্রধান। বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, জনতার আস্থা নিয়েই গঠিত হবে নতুন সরকার।

গেল কয়েকমাস ধরে ক্ষোভের আগুনে ফুটন্ত শ্রীলঙ্কা চায় স্বস্তি। রাজাপাকসে পরিবারের পতনের মাধ্যমে হয়েছে একটি সমস্যার সমাধান। কিন্তু সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ, নতুন সরকার গঠন। বুধবার (২০ জুলাই) সে লক্ষ্যেই হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই সামনে এসেছে প্রশ্ন, কেমন নেতৃত্ব দেখতে চান লঙ্কানরা? সাধারণ এক লঙ্কান বলেন, যে সরকার জ্বালানি, ওষুধ, খাবারের যোগান দিতে পারবে, তাকেই চাই ক্ষমতায়। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ করুক। নতুন সরকারেও যেন তার উপস্থিতি না থাকে। কারণ, সে রাজাপাকসে পরিবারেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন, মতাদর্শও একই।

আরেকজন বলেন, যারা নিজেরাই দিনের পর দিন রাজনীতিতে ব্যর্থ, তারা দেশের জন্য কী করবেন? যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা কীভাবে গড়বেন দেশের ভবিষ্যৎ? সে কারণেই, আমরা নেতৃত্ব সংকটে ভুগছি। এতো অল্প সময়ে, যোগ্য নেতা খুঁজে বের করা কঠিন।

প্রেসিডেন্ট পদের অন্যতম প্রার্থী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান সাজিথ প্রেমাদাসা মুখোমুখি হয়েছিলেন বার্তা সংস্থা এপি’র। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দেশত্যাগী রাষ্ট্রপ্রধানের শাস্তি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই হবে নতুন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, লুটতরাজ চালানোদের শাস্তি নিশ্চিত প্রথম কাজ। তবে, সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে হবে বিচার। ক্ষমতায় গেলে সরকার কাঠামোয় আনতে হবে পরিচ্ছন্নতা; দূর করতে হবে স্বৈরতন্ত্র। শ্রীলঙ্কা বর্তমানে ঋণখেলাপি। সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কষ্টকর। যার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সক্ষমতা। জনতার দুঃখ কষ্ট লাঘব করাই হবে দায়িত্ব।

সাজিথ প্রেমাদাসা জানান, মসনদে বসলে দুর্নীতি নির্মূল হবে তার প্রশাসনের অন্যতম টার্গেট। জনতাই সব ক্ষমতার উৎস। তিনি বলেন, দুর্নীতি বিরোধী সূচক থেকে মুছতে হবে শ্রীলঙ্কার নাম। তুলতে হবে সুশাসনের তালিকার শীর্ষে। গড়তে হবে স্বচ্ছ সরকার কাঠামো, যেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জনগণের কাছে করবেন জবাবদিহি, হবে দায়িত্বশীল। কঠিন সময়েও পার্লামেন্টের আসন বণ্টনের ব্যাপারে বাছবিচার করতে হবে। সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্লেষকদের অভিমত, টালমাটাল অর্থনীতি শান্ত হলেই রাজনীতিতে ফিরবে শান্তি। সেজন্য হাল ধরা প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্য নেতার। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক বিশ্লেষক পোকিয়াসোথি সারাভানামুত্তু বলেন, অর্থনীতিকে উদ্ধারের জন্যেই দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা প্রয়োজন। এমন নেতৃত্বকে ক্ষমতায় বসাতে হবে যে বিশ্বাসযোগ্য। যার প্রতি থাকবে জনতার আস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্য, রনিল বিক্রমাসিংহে সেই অবস্থান হারিয়েছেন। বর্তমানে এমন রাষ্ট্রপ্রধান প্রয়োজন যে জনগণকে সাথে নিয়ে সংকটের সমাধান করবেন।

বর্তমানে শূন্যের কোঠায় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গেলো মাসেও মুদ্রাস্ফীতি ছিলো ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। তার মাঝে, শনিবার (১৬ জুলাই) তিনটি জ্বালানি শিপমেন্টের প্রথমটি লঙ্কান বন্দরে পৌঁছেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, মঙ্গলবার নাগাদ দেশটির পেট্রোলের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।

আরও পড়ুন: পেট্রোল-ডিজেল নয়, ৯ বছর ধরে রান্নার তেল দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছেন ভারতের যুবক!

/এম ই

Exit mobile version