Site icon Jamuna Television

মাত্র একজন শিক্ষক নিয়ে চলছে স্কুলটি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে একটি স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম। দীর্ঘদিন শিক্ষক সংকটের কারণে স্কুলটির অর্ধেক শিক্ষার্থী চলে গেছে অন্য প্রতিষ্ঠানে, ঝরেও পড়েছে অনেকে। এমন অবস্থায় বারবার অনুরোধ করেও মেলেনি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ।

সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে স্থানীয় সহকারী শিক্ষা অফিসার একটিবারও পরিদর্শন করেনটি স্কুলটি, নেননি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ফলে বেহাল দশা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

সরেজমিন পর্যবেক্ষণে চিলমারী নৌ-বন্দর থেকে দেড় ঘণ্টা শ্যালো নৌকায় করে এই প্রতিবেদক উপস্থিত হন চিলমারী উপজেলার অস্টমীর চর ইউনিয়নেরর ডাটিয়ার চর গ্রামে অবস্থিত নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলে শিক্ষার্থীরা তখন বিচ্ছিন্নভাবে ক্লাস ও ক্লাসের বাইরে অবস্থান করছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. রোজিনা খাতুন জানান, তিনি একাই গত দুই ছর ধরে স্কুলে পড়াশুনা চালিয়ে আসছেন। স্কুলটি ১৯৯১ সালে ব্রহ্মপূত্র নদের কোলে অবস্থিত নটারকান্দি গ্রামে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হলে ওই বছর পার্শ্ববর্তী ডাটিয়ার চরে আবার ভবন তোলা হয় স্কুলটির। সেই থেকে স্কুলটি এখানেই রয়েছে। ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণের সময় ৫ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। এরপর ২০২০ সালে পর্যায়ক্রমে স্কুলের ৪ জন শিক্ষক অবসরে যান।

এরপর থেকে ওই বিদ্যালয়ে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে গত দুই বছর ধরে একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুল পরিচালনা করায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে বেহাল দশা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির। স্কুলের হাজিরা খাতা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৭ জন। বৃহস্পতিবার স্কুলে সব ক্লাস মিলে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৭ জন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোজিনা খাতুন জানান, প্রধান শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন ২০২০ সালে অবসরে যান। এরপর একই বছর সহকারী শিক্ষক মো. আছির উদ্দিন, আব্দুস ছামাদ ও মো. সোলায়মান হোসেন অবসরে গেলে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার একার পক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫টি
শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

অভিভাবক মাহমুদ আলী ও স্থানীয় অধিবাসী জহুরুল ইসলাম ও জব্বার আলী জানান, এডহক কমিটির আহ্বায়ক হওয়া সত্ত্বেও একবারও স্কুলটি ভিজিটে আসেননি চিলমারী উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার একেএম জাকির হোসেন। স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম ধ্বংসের জন্য তার অবহেলাকে দায়ী করেন তারা। শূন্যপদে চরাঞ্চলের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ারও দাবি জানান তারা।

স্কুলের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমা, মেরিনা ও ফারিয়া এবং ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোজাহিদ ও আখতারুন জানায়, স্কুলে শিক্ষক না থাকায় সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশুনা হচ্ছে না। ফলে অধিকাশ শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে।

যোগদানের পর স্কুল ভিজিট না করার কথা স্বীকার করে চিলমারী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার একেএম জাকির হোসেন বলেন, আমি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে উপজেলায় যোগদান করেছি। নানান ব্যস্ততার কারণে স্কুল পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে এবং দ্রুতই স্কুলটিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী আফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় বিষয়টি আমার নজরে আসে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আলোকে ২/৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। যাদের বেতন উপজেলা প্রশাসন থেকে ব্যয় করা হবে। পরবর্তীকালে শিক্ষক নিয়োগ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।

/এডব্লিউ

Exit mobile version