Site icon Jamuna Television

মাঝ পথে বিআরটিসি বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিলো বাস মালিকরা

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী বিআরটিসি বাসের যাত্রীদের ভাঙ্গা থেকে নামিয়ে দিয়ে বোয়ালমারী-ঢাকা রুটে শুরু হওয়া বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপ।

বুধবার (১০ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপ। এ সময় বাসের স্টাফ ও চালককে মারধরের হুমকি ও যাত্রীদের সাথে অসদাচরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে চালু হতে না হতেই বন্ধ করে দেয়া হলো বোয়ালমারী-ঢাকা রুটের বিআরটিসি বাস চলাচল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী পৌর বাস টার্মিনালের বিআরটিসি কাউন্টার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার
ট্রিপের একটি বাস সকাল ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ৪২ সিটের বাসটির সবগুলো সিট ছিল পূর্ণ। ওই বাসের স্টাফ তারিকুল ইসলাম বলেন, বোয়ালমারী থেকে ছেড়ে সকাল ৮টার দিকে তাদের বাসটি ভাঙ্গা পৌরসভার সামনে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশের আগমুহূর্তে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় এক-দেড়শো লোক মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে তাদের বাসের গতিরোধ করে। এরপর তারা বাসের চালক রাকিবুল ইসলামের ওপর চড়াও হয়ে মারতে উদ্যত হয় এবং ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়। আমি বাধা দিতে গেলে
আমাকেও হুমকি দেয়া হয়। এ সময় বাসের যাত্রীদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের বাস থেকে নামিয়ে
দেয়া হয়।

তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে তাদের ভাড়ার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আমরা ঢাকার দিকে চলে
আসতে চাইলে আমাদের বাধা দেয়া হয়। বোয়ালমারী ফিরে আসতে চাইলেও ফিরতে দেয়া হয়নি। পরে বাস ড্রাইভার বলে যে তার বাড়ি মাগুরা, তিনি বাস নিয়ে মাগুরা ফিরে যেতে চান। পরে মাগুরা যাওয়ার শর্তে তাদের সেখান থেকে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়। এবং ‘ফের এই পথে বাস চালালে হাত-পা কেটে দিবো’- এমন হুমকি দিয়ে তারা আমাদের বাসটি ছেড়ে দেয় বলে জানান তিনি।

বিআরটিসি বাস বন্ধ করে দেয়ার খবর বোয়ালমারীতে পৌঁছালে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, কোনোপ্রকার আলোচনা
ছাড়াই বোয়ালমারী থেকে বিআরটিসি বাসটি চলাচল শুরু করে। এ কারণে ভাঙ্গা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে ওই বাস
চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বিষয়টি প্রশাসনও জানে। কিন্তু এরপর বোয়ালমারীর কিছু ছেলেপেলে আমাদের লোকাল
বাস চলাচলে ডিস্টার্ব করছে।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলায় পদ্মা সেতু হয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলের যে তালিকা বিআরটিএ দিয়েছে সেখানে কোনো উপজেলাভিত্তিক বাস চলাচলের অনুমতি নেই। আর ফরিদপুরে বিআরটিসির কোনো ডিপো নেই৷ এরা কুমিল্লা ডিপোর বাস এনে ওই ডিপোর ম্যানেজারের নামে লিজ নিয়ে বাস চালাচ্ছিলো। এতে আমাদের বাস মালিক গ্রুপের বাস চলাচলে সমস্যা হবে, ব্যবসার ক্ষতি হবে। এ কারণে আমরা বাসের স্টাফদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড রেখে তাদের যাত্রী নামিয়ে বাসগুলো ফিরিয়ে দেই। তবে কারো সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়নি এবং কাউকে হুমকিও দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ ধরনের একটা খবর জানতে পেরেছি তবে কেউ কোনো
অভিযোগ জানায়নি। এ ব্যাপারে বিআরটিসি বাসের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিকেলে বোয়ালমারী-ঢাকা বিআরটিসি বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুর রহমান। প্রথম দিন বিআরটিসির এ এসি বাসটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিলো। যাত্রীরা জানান, বাস মালিক গ্রুপের নরমাল পরিবহনে ভাড়া নিতো পাঁচশো টাকা। সেখানে বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া সাড়ে পাঁচশো। এতে
যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়।

/এসএইচ

Exit mobile version