Site icon Jamuna Television

আমাদের ‘আদম সুরত’

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। (১৯২৩-১৯৯৪)

তিনিই প্রথম এশীয় যার আঁকা ছবি পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, পল ক্লি’র মতো বিশ্ববিখ্যাত আঁকিয়েদের ছবির সঙ্গে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত এ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৯তম জন্মদিন আজ। এ দেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ তৈরি হয় তাকে নিয়েই। নির্মাতা ছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চচিত্রকার তারেক মাসুদ।

বাংলাদেশি আধুনিক চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সেমিনার ওয়ার্ক নির্ভর দেশের প্রথম আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’। সুলতানের জীবনকে ১৬ মিলিমিটার ফিল্মে ধারণ করেন তারেক মাসুদ। তবে সুলতানের দৈনন্দিন কর্মজীবন তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচিত্রও উপস্থাপন করা হয়েছে এ প্রামাণ্যচিত্রে।

সুলতান প্রবাস থেকে ফিরে নাগরিক ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে সাধারণ গ্রামীণ কৃষকের জীবন, তাদের উৎসব, তাদের সংস্কৃতি তথা বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে করে নিয়েছিলেন তার চিত্রকলার বিষয়বস্তু। তারেক মাসুদের ‘আদম সুরত’ চলচ্চিত্রটি চিত্রায়িত করতে গিয়ে উঠে এসেছে চিত্রা নদীর পাড়ের তথা বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির রূপ।

মূলত, এ চলচ্চিত্রটি জীবনীমূলক ছিলো না, বরং এক ধরনের আত্মকথনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে শিল্পী এস এম সুলতানের সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা এবং বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষি চিত্র। আধুনিক চিত্রশিল্পী হিসেবে তার যশ, খ্যাতি, পশ্চিমা লাইফস্টাইল, সব পেছনে ফেলে শৈশব কাটানো সেই গ্রামে ফিরে কৃষকদের সাথে মিশে যান সুলতান। দীর্ঘদিনের এ সম্পর্ক ও কৃষকসমাজ কীভাবে তার শিল্পাদর্শ ও জীবন দর্শনকে প্রভাবিত করেছে সেটি তুলে ধরাই ছিলো ‘আদম সুরত’ এর প্রধান উদ্দেশ্য।

১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ প্রামাণ্যচিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করেন তারেক মাসুদ নিজেই, আর নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন ক্যাথরিন মাসুদ। চিত্রগ্রহণ করেন মিশুক মুনীর এবং সম্পাদনা করেন নজরুল ইসলাম। বাংলা ও ইংরেজি ধারাবর্ণনা করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও আলমগীর কবির। ১৯৮২ সাল থেকে টানা সাত বছর ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তারেক মাসুদ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন। ১৯৮৯ সালে আদম সুরতের প্রথম প্রদর্শনী হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯১ সালে ঢাকার গ্যোটে ইনস্টিটিউটে প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী করা হয়।

সুলতান ছিলেন একজন দার্শনিক। তারেক মাসুদ সুলতানের ভেতরকার এ দার্শনিক শিল্পীকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। সুলতান শুধু শিল্পীই ছিলেন না, তিনি সংগীত ভালোবাসতেন। খুব ভালো বাঁশি বাজাতে পারতেন তিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের বীজ ছড়িয়ে দিতে নানান উদ্যোগ নিয়েছিলেন আমাদের ‘আদম সুরত’। এখনও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ শিল্পীর দেখানো পথেই এগিয়ে চলেছে শৈল্পিক রেনেসা অর্জন আর মুক্তির পথে।

/এসএইচ

Exit mobile version