Site icon Jamuna Television

বালুচরে মাছ চাষে সফল ঝিনাইদহের সাগর

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
নদীতে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরের ওপর মাছের চাষ করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছে ঝিনাইদহের প্রত্যন্তপল্লী শৈলকুপার পুরাতন বাখরবা গ্রামের বেকার যুবক রাকিবুল ইসলাম সাগর। প্রথমে তাকে পাগলই বলেছিল অনেকে, আর এখন সেখানে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে বড় বড় মাছ দেখে অনেক যুবকই তার সাথে যোগ দিয়েছে মাছের চাষে। বালুতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে পতিত, ডুবোচর ও জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে তেলাপিয়া, জাপানি পুঁটি, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে ভাল লাভজনক হতে পারে বলে মনে করছে অনেকে।

কাটাযুক্ত বাদে সব ধরণের মাছই এভাবে চাষ সম্ভব এবং কেজি পর্যন্ত মাছের ওজন করা যেতে পারে। আর মাছ উৎপাদনে দেশ এক নম্বার অবস্থানেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছে এমন চাষের উদ্ভাবক রাকিবুল ইসলাম সাগর। আর মৎস্য অফিস বলছে, এটা রীতিমতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ, যা কাজে লাগিয়ে দেশের মৎস চাষের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি ও চাষ করা সম্ভব।

দেখে মনে হতে পারে, এটা সাগরের কোন বেলা ভূমির দৃশ্য। অস্তমিত যাওয়া সূর্যের প্রতিফলন পড়ছে পানিতে কিন্তু আসলে তা না এটা ঝিনাইদহের শৈলকুপাতে গড়াই নদীতে জেগে ওঠ ধু ধু বালুচরে এ এক অন্যরকম দৃশ্য। পুকুর, জলাশয় বা বড় কোন জলাশয়ে যেমন মাছ খেলে বেড়ায় আপন মনে এখানেও সেভাবে খেলছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে মাছ। আর তা দেখতে ভীড় করছে নদী পাড়ের মানুষ ।

এভাবে বালির চরে মাছ চাষ সম্ভব বিস্ময়ে সে ঘোর যেন কাটছে না কারোর। কিন্তু বাস্তবতা দেখে শৈলকুপার পুরাতন বাখরবা গ্রামের যুবক সাগরের সাথে এবার আরো ৩ যুবক তাকে অনুসরণ করে এমন পদ্ধতিতে নেমে পড়েছে মাছ চাষে। তিনি জানান, গত বছর ১টি বেড তৈরি করে ৫ হাজার টাকার মাছ ছেড়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি ৩ মাসে। আর এবার ৪টি বেডে শুরু হয়েছে বালুতে মাছের এমন চাষ। ১০৫ ফুটের মতো দৈর্ঘ, ১৭-১৮ ফুট প্রস্থ আর ২ থেকে ৪ ফুট গভীরতাতেই বেড তৈরি করে পলিথিন বিছিয়ে দিয়ে শুরু করা যেতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ। নদীতে বর্ষাকালে পানি ভরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ মাস আর জেগে উঠা চরগুলোতে ৭/৮ মাসের বেশি সময় এভাবে মাছ চাষ সম্ভব।

‘বর্ষার জল সরিয়া গিয়াছে জাগিয়া উঠিয়াছে চর, গাঙ শালিকেরা গর্ত খুঁড়িয়া বাধিয়াছে সবে ঘর, ঠিক এভাবে বেকাররা দল বেধে দেশের চরে-ডুবো চরে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারে এমন আশাবাদ সাগরের। শুরু গল্পটা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পুকুর লীজ নিয়ে কৈ মাছের চাষ করেছিলাম, কিন্তু সেখানে লসের শিকার হই,শেষ করি ফেলি পুঁজিও, তাই নতুন কোন পদ্ধতি খুঁজতে ছিলাম। মাছ চাষে দীর্ঘ ৫ বছরের বেশি সময় বাড়ির আশপাশে গবেষণা চালাই। আমার কাছে মনে হয়েছে কাটাযুক্ত বাদে সব ধরনের মাছই এভাবে চাষ সম্ভব এবং কেজি পর্যন্ত মাছের ওজন করা যেতে পারে। আর মাছ উৎপাদনে দেশকে এক নম্বর অবস্থানেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব। পুকুর বা জলাশয় লীজ নিয়ে মাছ চাষ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, লস হতে পারে কিন্তু এভাবে কোন ঝুঁকি নেই। বড় ধরনের পুজি, অর্থ বা জমিরও দরকার লাগে না এভাবে মাছ চাষ করতে। এভাবে জানাচ্ছিলেন যুবক রাকিবুল ইসলাম সাগর।

শৈলকুপা মৎস্য অফিসের ফিল্ড কর্মকর্তা সালাউদ্দিন জানান, এটা উদ্ভাবনী চিন্তা, এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে মাছের চাষে একটি বিল্পব ঘটানো সম্ভব ।

এভাবে মাছ চাষের প্রক্রিয়াকে উদ্ভাবনী চিন্তার মধ্যে এনে কাজে লাগাতে পারলে দেশের মৎস্য চাষের মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছে মৎস অফিস।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, শুধুমাত্র কিছু সম্পুরক খাদ্য দিয়ে জমি, পুকুর, জলাশয় বা বড় ধরণের বিনিয়োগ ছাড়াই এ প্রক্রিয়ায় মাছের চাষ বিরাট লাভজনক করা সম্ভব।

Exit mobile version