Site icon Jamuna Television

ঝিনাইদহে সাড়া ফেলেছে শত সাপের ব্যতিক্রমী ‘ঝাপান খেলা’

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

মনিবের ইশারা ইঙ্গিত তাকে ঠিকমতোই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আজ শুধু মানুষকে আনন্দ দেয়ার খেলা নয় আজকেরটা মর্যাদার লড়াই। প্রতিযোগীদের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণিত করতে দলের ওঝাদের তাই চলে আপ্রাণ প্রচেষ্টা।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দিনব্যাপী আয়োজিত ‘ঝাপান খেলা’ দেখতে জড়ো হয় হাজারও মানুষ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাঙ্গা সাহেবনগর গ্রামে আদিবাসি সম্প্রদায়ের আয়োজনে মনসা পূজাকে ঘিরে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এ ঝাপান খেলা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে শত শত মানুষ আর মাঝে কাঠের মাচায় রাখা বিষধর সাপ। সাপুড়েরা বাদ্যের তালে তালে গান গাইছেন, আর সাপগুলোও সাপুড়ের দিকে তাকিয়ে তাকে ছোবল মারতে চাইছে। এভাবেই চলে সাপ-সাপুড়ের প্রেমের মিতালী। এক সাপুড়ের গান শেষ হলে তিনি বসে যান তার সাপগুলোকে নিয়ে। তারপর আসেন নতুন এক সাপুড়ে। তিনিও তার সাপগুলোকে প্রদর্শন করেন। এভাবেই দিনভর চলে সাপের খেলা।

এ বছর তিনটি দল এ খেলায় অংশ নিয়েছে। এ বছরের ঝাপান খেলায় প্রথম হয়েছেন আবু বক্কর সাপুড়ে, তাকে দেয়া হয় নগদ ১০ হাজার
টাকা।

সাপের খেলা দেখতে আসা মিনতী রাণী জানান, পাশের চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে তিনি এই পূজা এবং সাপের খেলা দেখতে বাবার বাড়িতে এসেছেন। মনসা পূজাকে ঘিরে তাদের সাথে আদিবাসি সম্প্রাদয়ের মধ্যে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ঝাপান খেলা দেখতে আসা জুয়েল নামের এক দর্শনার্থী জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলা আর কোথাও দেখা যায় না। এবারই প্রথম তিনি ঝাপান খেলা দেখতে এসেছেন বলেও জানান।

সাপুড়ে গোলাপ হোসেন জানান, শৈশব থেকেই তিনি পেশায় একজন সাপুড়ে। গ্রামের লোকের বাড়ি এবং মাঠ থেকে বিষধর সাপ ধরেন তিনি। সেগুলোকে পেলে পুষে বিক্রয় করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খেলা দেখান। এই সাপের খেলা (ঝাপান) দেখিয়ে সংসার না চললেও এ পেশাকেই জীবনধারণের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।

সাপুড়ে আবু বক্কর জানান, ১৬ বছর বয়স থেকেই তিনি সাপুড়ে। এখন আর সাপ ধরেন না। গোমা, আড়ল বেকা, গোখরা ও কেউটেসহ বিভিন্ন বিষধর সাপের খেলা দেখান তিনি। মানুষকে আনন্দ দেয়াই মূল উদ্দেশ্য তার বলে জানান এ সাপুড়ে।

পূজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল বিশ্বাস জানান, পূর্বপুরুষেরা মনসা পূজা উপলক্ষে এ সাপের খেলার আয়োজন করে আসছে। তাদের দেখাদেখি গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর বাজেট না থাকায় প্রথম পুরষ্কার হিসেবে ১০ হাজার টাকা এবং ২য় ও ৩য় পুরুস্কার ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এই ঐতিহ্য সাপের (ঝাপান) খেলাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে সাহায্য কামনা করেন তিনি।

পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি প্রেম বিশ্বাস বলেন, আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়। বিল-বাউড়ের মাছের ওপরেই আমাদের নির্ভরতা। বাপ-দাদা পূর্বপুরুষদের আমল থেকে মনসা পূজাকে ঘিরে সাপের খেলা বা ঝাপান খেলা দেখে আসছি। তাদের দেখাদেখি আমরাও আয়োজন করে আসছি। দরিদ্র মানুষ হিসেবে আমাদের যতোটুকু সামর্থ আছে তাতেই ছোট পরিসরে আমরা এই আয়োজন করে থাকি। তবে সরকারী সাহায্য পেলে হয়তো আরও বড় পরিসরে এই আয়োজনটা করতে পারতাম।

/এসএইচ

Exit mobile version