Site icon Jamuna Television

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ৬ মাস; যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক সংকটে নাকাল বহু দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ছয় মাস আগেও ছবির মতো সাজানো শহর ছিলো তোরেস্ক। এখন রুশ বাহিনীর তাণ্ডবে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। এমন চিত্র ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল জুড়েই। যেন ইরাক-সিরিয়া যুদ্ধের আরেক রূপ। ইউেক্রেন রুশ আগ্রাসনের ফলে দেশটিতে এ অবস্থা।

এ যুদ্ধের শেষ কোথায়? যে সংঘাতের জন্য আর কতই বা মাশুল গুনতে হবে বিশ্বকে? এমন অমীমাংসিত বহু প্রশ্ন রেখেই ছয় মাস পার হলো ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের। ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ আর অর্থনৈতিক সমীকরণ পাল্টে ফেলা এই যুদ্ধের প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব। খবর রয়টার্সের।

খাদ্য সংকট, জ্বালানির মুল্যবৃদ্ধি আর মুদ্রাস্ফীতির দাপটে নাকাল বহু দেশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, একরোখা রুশ নীতি আর পশ্চিমা কূটনীতির ব্যর্থতায় আরও দীর্ঘায়িত হবে যুদ্ধ।

এক ইউক্রেনীয় বলছিলেন, চোখের সামনে আমার বাড়ি, সম্পদ সব ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। আরেকজন বলছিলেন, আমার বাড়ি ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। যতই ধ্বংস হোক, মাটির সাথে মিশে যাক, আমি এখানেই থাকবো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।

ন্যাটোতে যোগদান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্যপদের বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধের জেরে গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। অভিযানের মুল লক্ষ্য হয়ে ওঠে দেশটির পুর্বাঞ্চলের এলাকাগুলো। আকাশ, স্থল আর সাগর থেকে মুহুর্মুহু হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে থাকে একের পর এক এলাকা।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট বলেন, ইউক্রেন ঘিরে পশ্চিমা কার্যক্রমকেই হুমকি নেয় রাশিয়া। ন্যাটোর পরিধি বাড়ানো কিংবা ইউক্রেনে মার্কিন ল্যাবরেটরি থাকার মতো ইস্যুগুলো রাশিয়াকে যুদ্ধের দিকে উস্কে দিয়েছে। গেল ছয় মাসে যুদ্ধ এমন একটা পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে যেখানে, ইউক্রেনের পক্ষে পশ্চিম এবং ইউরোপের শক্তিগুলো। অন্যদিকে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে চীন।

দীর্ঘ ছয় মাসের যুদ্ধে ক্ষতিটা স্পষ্টতই বেশি ইউক্রেনের। কৌশলভাবে গুরুত্বপূর্ণ মারিওপোল-ওডেসার মতো বন্দর নগরী দখলে নেয়ায় কৃষ্ণ সাগরে নিয়ন্ত্রণে রুশ বাহিনী। পূর্বাঞ্চলের বড় অংশেরই নিয়ন্ত্রণে রাশিয়া। ঝাপোরজিয়া পরমাণু কেন্দ্রও দখলে। প্রতিদিনই হামলার পরিধি বাড়াচ্ছে মস্কো।

ফলে এটা স্পষ্ট যে, রুশ বাহিনীকে হটাতে খুব বেশি সফল হয়নি ইউক্রেনীয় বাহিনী। অন্যদিকে মস্কোর পক্ষ থেকেও কোনো আভাস নেই আগ্রাসন বন্ধের। বারবার আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে সংঘাত বন্ধে। আর তাই সহসাই যুদ্ধ বন্ধের কোনো পরিস্থিতি দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

ইউক্রেন ফোরামের প্রধান গবেষক ওরিসিয়া লুতশেভিচ বলেন, ইউক্রেন বাহিনী গেরিলা স্টাইলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। পশ্চিমা অস্ত্র এবং অর্থ সহায়তায় এই প্রতিরোধ আরও জোরালো হয়েছে। কিন্তু কতটুকু অঞ্চল রুশ বাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার করতে পেরেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী? সেই পরিসংখ্যান কিন্তু খুবই হতাশাজনক। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধ তেমন কার্যকর নয়। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত হামলার পরিধি বাড়িয়ে চলেছে রুশ বাহিনী। কোনো আলোচনাই দমাতে পারেনি পুতিনকে। তাই এটা স্পষ্ট যে দীর্ঘ সময়ের জন্য চলবে এই যুদ্ধ।

রাশিয়া-ইউক্রেন ছাড়িয়ে যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে পুরো পৃথিবীতেই। বিশ্ব তোলপাড় করা এই যুদ্ধে পাল্টে গেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির সমীকরণ। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেলের সংকট দেখেছে বিশ্ব। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ শস্য সরবরাহকারী দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ হওয়ায় একদিকে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। অন্যদিকে দেখা দেয় খাবারের সংকট। মুদ্রাস্ফীতির তোড়ে নাকাল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।

তবে একেবারেই আশা ছাড়তে নারাজ বিশ্লেষকরা। শান্তি আলোচনা কার্যত সফল না হলেও, শস্য সরবরাহ নিয়ে সাম্প্রতিক চুক্তি বিবদমান পক্ষগুলোর ইতিবাচক মনোভাব হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও একে অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তের এক চিলতে আলো বলেই মনে করছেন তারা।

/এমএন

Exit mobile version