ছবি: সংগৃহীত
শর্ট ডেলিভারিগুলোকে স্কয়ারে পাঠাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। হার্দিক পান্ডিয়ার করা এমন এক বলকে পাকিস্তানের ইনফর্ম ওপেনার স্টিয়ার করতে চাইলেন। কিন্তু একটা গড়বড় হয়ে গেল হিসেবে। হার্দিকের পেসকে খুব একটা সমীহ করেননি রিজওয়ান।
আর তাতেই বেজে গেল বিদায়ঘণ্টা! কারণ এই হার্দিক আগের হার্দিক নয়। এই হার্দিক ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুঁড়ে দিতে পারেন মরণঘাতী বাউন্সার; যিনি আবার এমএস ধোনির মতো ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে মাঠেই ধ্বংস করতে পারেন প্রতিপক্ষকে। আর এটাই এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের এক হাইলাইটস। যেখানে হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাট-বলের কাছে নতি শিকার করতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইনজুরিতে পড়ে দলের বাইরে চলে যান হার্দিক পান্ডিয়া। আর কখনও বল করতে পারবেন কিনা, আর তা না পারলে কেবল ব্যাটার হিসেবে ভারতীয় দলে জায়গা হবে কিনা তার; এমন বহু প্রশ্নই তখন উঠে গেছে দিকে দিকে।
এরপর হার্দিকে ফিরেছেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেবল ব্যাটার হিসেবেই খেলেছেন। সেই আসরের পর খাওয়া, ঘুম, অনুশীলনে নিজেকে বেঁধেছেন; ঘড়ি ধরে সব মেনে চলেছেন রোবটের মতো। ব্যাটিংয়ের সময় যে চেস্ট গার্ড কখনই পড়তে চাননি ‘ইগো ইস্যু’র কারণে, সেটিও ঠিক করেছেন সময়ের সাথেই। আইপিএলে গুজরাট টাইটানসের অধিনায়ক হয়ে প্রথমবারেই দলকে জিতিয়েছেন শিরোপা। ব্যাট করেছেন টপ ও মিড অর্ডারে। ফিনিশার হয়ে শেষ করেছেন ম্যাচ। কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছেন নিজেকে। শক্ত ও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছেন প্রতিবার।

দুবাইয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে হার্দিক পান্ডিয়া ফিরিয়েছেন চিরায়ত ফাস্ট বোলারের ডেলিভারিতে। স্পিডগান না দেখেও বলে দেয়া যায়, সেই ডেলিভারির গতি অবাক করেছিল রিজওয়ানকে। এরপর ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল শাহকেও শর্ট বলে আউট করে পাকিস্তান ইনিংসের মেরুদণ্ডই ভেঙে দিয়েছেন হার্দিক। আর তিনটি ডেলিভারিই ছিল ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতির বেশি বা কাছাকাছি। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া বলেন, বোলিংয়ে আমার পরিকল্পনা ছিল খুবই সাধারণ। হার্ড লেংথে বল করাটা আমার শক্তির জায়গা। ব্যাটারকে এই চ্যালেঞ্জটাই করি আমি আর অপেক্ষায় থাকি একটা ভুল শটের।
বল হাতে হার্দিকের পারফরমেন্সের পরও ম্যাচ দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। ভারতের দিকে ম্যাচকে হেলানোর জন্য ব্যাটার হার্দিকের পারফরমেন্সও চাইছিল দল। নাসিম শাহর ওভারে হার্দিকের ৩টি বাউন্ডারির আগে, এমনকি পরেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না কিছুই। রান তাড়ার এই প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দেয় এমএস ধোনিকে। এমএসডি’র মতো হার্দিক বুঝলেন, তার চেয়েও বেশি চাপে আছে বোলার। আর ম্যাচ বের করতে তার লাগবে কেবল একটা-দুটো আলগা বল।

তারপর শেষ ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজ বোলিংয়ে এসেই ফেরালেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। ক্রিজে এসে দীনেশ কার্তিক সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন হার্দিককে। একটা ডটও বেরুয়ে গেল। এরপর ৩ বলে ভারতের চাই ৬ রান। কিন্তু কার্তিককে ইশারায় হার্দিক অভয় দিলেন, বাকিটা তিনিই করবেন, করলেও। লং অন দিয়ে ফ্ল্যাট সিক্সের সাথে অনিশ্চয়তাকেও গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন এই ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার।
হার্দিক পান্ডিয়ার এমন পারফরমেন্সে ভরসা পাচ্ছেন নিশ্চয়ই ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ম্যাচ শেষে জানালেন, হার্দিক এখন অনেক শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী। নিজের খেলা এই অলরাউন্ডার অনেক ভালোই বুঝতে পারেন বলেও জানালেন রোহিত। বললেন, দারুণ চাপের এমন ম্যাচে যখন ওভারপিছু ১০ করে রান করতে হবে, তখন কিন্তু ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিজে শান্ত থাকতে পারা হার্দিক এখন তার দলের এক ভরসার নাম।
অবশ্য তা না হওয়ার কারণ কই! ভারত যে তাদের দলে বেন স্টোকসের মতো এমন এক অলরাউন্ডার পেতে যাচ্ছে, যিনি বল হাতে ভড়কে দেবেন প্রতিপক্ষকে, আর ব্যাট হাতে দুমড়েমুচড়ে দেবেন বিপক্ষের কৌশল। আবার, ভরা গ্যালারির স্লোগানে নিজের নাম শোনার মধ্যেও মহেন্দ্র সিং ধোনির ইস্পাতদৃঢ় স্নায়ুতে বলকে আছড়ে ফেলবেন প্যাভিলিয়নে; দলকে টেনে নেবেন জয়ের বন্দরে।
আরও পড়ুন: আরও কিছু রান হলে ম্যাচের ভাগ্য অন্যরকম হতো: বাবর
/এম ই
Leave a reply