চার্চিল থেকে লিজ; প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের তালিকা ১৬-তে নিয়ে যাচ্ছেন কুইন এলিজাবেথ

|

কুইন এলিজাবেথ দ্য সেকেন্ড।

এক-দু’জন নয়, সিংহাসনে আরোহণের পর সাত দশকে ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এসব প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে রয়েছেন নব-নির্বাচিত লিজ ট্রাসও। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, গোটা বিশ্বে এটি অনন্য এক রেকর্ড। দেশটির বিগত সরকার প্রধানরা বলেছেন, একজন দক্ষ পরামর্শক-পথ প্রদর্শক বা অভিভাবক হিসেবে রানী এলিজাবেথ অতুলনীয়। শুধু জনসম্মুখেই নন, রূদ্ধদ্বার বৈঠকেও রানী তার সরকার প্রধানদের সাথে সবসময়ই হাস্যজ্জ্বল ও বন্ধু বৎসল।

সিংহাসনে আরোহণের পর, রানীর প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। সে সময়, অভিভাবকের মতো তরুন এ সম্রাজ্ঞীকে আগলে রেখেছিলেন সরকার প্রধান চার্চিল। এরপরে স্বল্প মেয়াদে ক্ষমতায় আসা অ্যান্থনি অ্যাডেন ক্ষমতায় এসেই ১৯৫৬ সালে দেন সুয়েজ খালে সেনা পাঠানোর নির্দেশ। সে সময়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভাঙ্গার জন্য অঞ্চলটিতে বাড়ছিলো বিদ্রোহ। ১৯৬৪ সালে, হ্যারল্ড উইলসন ছিলেন রানীর শাসনামলে প্রথম লেবার প্রধানমন্ত্রী। সাংবিধানিক নীতিমালা অনুসারে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন, রানী ২য় এলিজাবেথ। উৎসাহ বা জাতীয় ইস্যুতে পরামর্শও দিতে পারেন তিনি। এমনকি, বিতর্কিত ইস্যুতে সরকার প্রধানদের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি তিনি।

এলিজাবেথের দীর্ঘ শাসনামলের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দ্য আইরন লেডি মার্গারেট থ্যাচার। সংবাদকর্মী ও জীবনী লেখকদের কলামে উঠে এসেছে- এ সরকারের গঠনে খুব একটা খুশি ছিলেন না রানী, ছিল সংশয়ও। কিন্তু, খুব ভালোভাবেই তিন মেয়াদে ক্ষমতা সামলেছেন আয়রন লেডি।

প্রায় সব সরকার প্রধানই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, রানীর পরামর্শ তাদের সামনে উন্মোচন করেছে রাষ্ট্র পরিচালনার নিত্যনতুন দিক। বাকিংহাম প্যালেসের চায়ের আসরেই তারা শিখেছেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক, অর্থনীতি এবং বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের নানা কৌশল।

ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেন, আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি; তখনও রানী জন সমাগমে নিয়মিত আসতেন। তার প্রত্যেকটি পরামর্শ শুধু কার্যকরীই নয়, তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ।

দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, যখনই লক্ষ্য অর্জনের বিষয়গুলো রানীর সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবেন; তিনি হবেন আপনার একান্ত উপদেষ্টা। ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে, তিনিই হবেন অভিভাবক।

একটি দেশের ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী, তাদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার অধিকারী ছিলেন নিঃসন্দেহে। দীর্ঘ সাত দশক সব ভেদাভেদ ভুলে তাদের সাথে কাজ করেছেন রানী ২য় এলিজাবেথ। দেশটি প্রশাসনের মধ্যমণি এখনও সম্রাজ্ঞী; বয়সের সীমারেখা উহ্য রেখে রাষ্ট্রপ্রধানদের দিয়ে চলেছেন পরামর্শ, করছেন হুঁশিয়ারিও।

রানী এলিজাবেথের হাতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীরা:

১. উইনস্টন চার্চিল ( কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৫১-১৯৫৫)

১৯৫৩ সালে উইন্সটন চার্চিলের সাথে রানী এলিজাবেথ, সাথে প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস অ্যানকে দেখা যাচ্ছে।

২. অ্যান্থনি ইডেন (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৫৫-১৯৫৭)

১৯৫৬ সালে এক অনুষ্ঠানে স্যার অ্যান্থনি ইডেনের সাথে করমর্দনরত রানী এলিজাবেথ।

৩. হ্যারল্ড ম্যাকমিলান (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৫৭-১৯৬৩)

১৯৬০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে রানী এলিজাবেথকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যন্সেলর ও প্রধানমন্ত্রী স্যার হ্যারল্ড ম্যাকমিলান।

৪. অ্যালেক ডগলাস-হোম (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৬৩-১৯৬৪)

১৯৬৪ সালে কাউন্টি হলে স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম ও লেডি হোমের সাথে কুশল বিনিময়রত রানী এলিজাবেথ।

৫. হ্যারল্ড উইলসন (লেবার পার্টি, ১৯৬৪-১৯৭০)

১৯৬৯ সালে হ্যারল্ড উইলসনের সাথে রানী এলিজাবেথ।

৬. এডওয়ার্ড হিথ (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৭০-৭৪)

১৯৭০ সালে চেকার্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রানী এলিজাবেথ, স্যার এডওয়ার্ড হিথ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ফার্স্ট লেডি প্যাট নিক্সন।

৭. হ্যারল্ড উইলসন (লেবার পার্টি, ১৯৭৪-১৯৭৬)

১৯৭৬ সালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে রানী এলিজাবেথকে স্বাগত জানাচ্ছেন স্যার হ্যারল্ড উইলসন।

৮. জেমস কালাহান (লেবার পার্টি, ১৯৭৬-১৯৭৯)

১৯৭৭ সালে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে স্যার জেমস কালাহান ও রানী এলিজাবেথ।

৯. মার্গারেট থ্যাচার (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৭৯-১৯৯০)

১৯৮৪ সালে বাকিংহাম প্যালেসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রানী এলিজাবেথ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও আইরন লেডি মার্গারেট থ্যাচার।

১০. জন মেজর (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৯০-১৯৯৭)

১৯৯২ সালে এক অনুষ্ঠানে রানি এলিজাবেথ ও সাবেক চার প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্যার জন মেজর। (বাম থেকে) মার্গারেট থ্যাচার, হ্যারল্ড উইলসন, জন মেজর, রানি এলিজাবেথ, এডওয়ার্ড হিথ ও জেমস কালাহান।

১১. টনি ব্লেয়ার (লেবার পার্টি, ১৯৯৭–২০০৭)

২০০২ সালে সরকার গঠনের সময় বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানী এলিজাবেথের সাথে টনি ব্লেয়ার।

১২. গর্ডন ব্রাউন ( লেবার পার্টি, ২০০৭-২০১০)

২০০৭ সালে রানীর সাথে সাক্ষাতকালে গর্ডন ব্রাউন।

১৩. ডেভিড ক্যামেরন (কনজারভেটিভ পার্টি, ২০১০-২০১৬)

২০১০ সালে সরকার গঠনের উদ্দেশে রানীর আমন্ত্রণে বাকিংহ্যাম প্যালেসে গিয়েছিলেন ডেভিড ক্যামেরন।

১৪. তেরেসা মে (কনজারভেটিভ পার্টি, ২০১৬-২০১৯)

২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানীর সাথে সাক্ষাৎকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে।

১৫. বরিস জনসন (কনজারভেটিভ পার্টি, ২০১৯-২০২২)

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানীর সাথে সাক্ষাৎকালে বরিস জনসন।

/এসএইচ



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply