Site icon Jamuna Television

দুইশ’ বছরের ঐতিহ্য: এক সাথে কলা পাতায় খেলো গ্রামবাসী

মোজাম্মেল হোসেন মুন্না, গোপালগঞ্জ

অন্ততঃ দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। মুন্সী বংশের এসব গ্রামবাসী ঈদের নামাজ শেষে এক সাথে দল বেঁধে সবার বাড়িতেই ঈদের খাবার খেতে যান। আর এসব খাবার খান কলা পাতায় করে। সে ধনী বা দরিদ্র হোক না কেন। এভাবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তারা ধরে রেখেছেন বছরের পর বছর।

কলার পাতায় করে ঈদের খাবার খাওয়া, এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার এ গ্রামটির নাম ভাটিয়াপাড়া। এখানকার ২/৪ ঘর বাদে সবাই মুন্সী বংশের। তারা পূর্ব পুরুষ থেকে এক সাথে ঈদের নামাজ শেষ করে বিভিন্ন বাড়িতে দল বেঁধে যান। খাবার খান এক সাথে। সে জন্য বসার আলাদা কোন ব্যবস্থা থাকেনা। মাটিতে বসে কিংবা হাতে হাতে নিয়ে সেমাই, মিষ্টি, পোলাও, মাংস খেয়ে থাকেন।

ওই গ্রামের মুন্সী তাইমুর ইসলাম, মুন্সী দাউদ আলি, মুন্সী আইয়ুব আলি জানালেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামে রয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। সুন্দর পরিপাটি এ গ্রামের বাড়ি গুলো বেশ সাজানো গোছানো। রাস্তার পাশেই সব বাড়ি। তারা তাদের পূর্ব-পুরুষের যে রেওয়াজ সেটি ধরে রেখেছেন। ঈদের নামাজ শেষ করে আশে-পাশের কয়েকটি বাড়ির খাবার এক জায়গা করা হয়। এভাবে গ্রামের কয়েকটি স্থানে খাবার জড়ো করে দলে দলে লোকজন গিয়ে সে সব খাবার খেয়ে থাকেন এবং এ জন্য কোন প্লেট বা চেয়ার টেবিলের ও ব্যবস্থা থাকেনা। কলার পাতায় এবং যার যার হাতে হাতে করে এসব খাবার খেয়ে থাকেন আনন্দের সাথে।

এতে গ্রামের সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ে,  অপরের প্রতি সহনশীল হয়ে থাকে। তারা জানান, গ্রামটিতে তেমন মামলা মোকদ্দমাও হয় না। ছোটখাটো কোন ঘটনা ঘটলে তা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলেন। তিন প্রজন্মের লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বাপ-দাদার আমল থেকে এমন রেওয়াজ দেখে এসেছেন, আগামীতেও যাতে এ ঐতিহ্য চলমান থাকে তার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এ ঐতিহ্যকে ভাটিয়াপাড়া গ্রামবাসী ধরে রাখায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা যদি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া যায় তা’হলে মানুষে মানুষে বিভেদ কমে আসবে।

এমন ঐতিহ্য বছরের পর বছর ধরে রেখে ভাটিয়াপাড়া গ্রামবাসী নিজেদেরকে গর্বিত মনে করেন। পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন ঈদের সময় তাদের এ ঐতিহ্য আগামীতে ধরে রাখবে এ প্রত্যাশা রাখেন।

Exit mobile version