Site icon Jamuna Television

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: ইসির রোডম্যাপে যা বলা হয়েছে

নির্বাচন কমিশন। ফাইল ছবি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রকাশিত ২০ পৃষ্ঠার কর্মপরিকল্পনায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভোট হবে ডিসেম্বরের শেষ অথবা চব্বিশ সালে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে; মোট ১৫ দিনের মধ্যে ভোটের সময় রেখে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।

ইসি ঘোষিত এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে এক অনুষ্ঠানে এটি প্রকাশ করা হয়। অসুস্থ থাকায় উপস্থিত ছিলেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন তাতে।

নিজেদের জবাবদিহিতা ঠিক রাখতেই ভোটের কর্মপরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। বলেন, ইসি অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন। আস্থাহীনতা আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। বর্তমান কমিশন আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

আরেক নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন বলেন, নির্বাচন ঘিরে হয়রানিমূলক মামলা যাতে না হয়, সে পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবো।

কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের পথে ১৪টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে ইসি। এগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে কর্মপরিকল্পনার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, ভোটের মাঠে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, অর্থ ও পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সব দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, জাল ভোট ঠেকানো, প্রার্থী এজেন্ট ও ভোটারদের আসা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

চ্যালেঞ্জ উত্তরণে মোটি ১৯টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। ইসির কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ হলো:

চ্যালেঞ্জ:
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি; নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশেষ করে, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন; ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি; অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা; সব রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ; নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ/ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/ সমর্থক/ পুলিশ/ প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া; জাল ভোট/ ভোটকেন্দ্র দখল/ ব্যালট ছিনতাই রোধ; পৃথিবী/ এজেন্ট/ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন; ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি; নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা/ কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান; পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ; পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী/ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ; নিরপেক্ষ দেশি/ বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ।

উত্তরণের উপায়:

বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশজনই করেছেন, তা বাস্তবায়ন; সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা; সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাঁদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ; নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া; মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের সঙ্গে সভা করে তাদের অধীন কর্মকর্তা, যাঁরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁরা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, সে বিষয়ে অধীনস্থ ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া; প্রতি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; ভোটকেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন; ইভিএমের ব্যবহার সবোর্চ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা।

শুধু মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোয় ব্যবহার করা; নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ; নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ; আরপিও ও নির্বাচনী আচরণবিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, যত দূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা, যাতে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়; যেসব প্রিসাইডিং/ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসংগত আপত্তি থাকবে তাদের নিয়োগ না দেয়া; দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা; গণমাধ্যমকর্মী নিয়োগ ও তাদের জন্যও ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা; নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা; প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় শিডিউল করে দেয়া।

/এমএন

Exit mobile version