হিজাব ‘ঠিকমতো’ না পরায় আটক নারীর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এখনও বিক্ষোভে উত্তাল ইরান। সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীও রয়েছে মারমুখী ভূমিকায়। দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও কম বলে দাবি ইরান প্রশাসনের।
গত সপ্তাহে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনিকে হিজাব আইনে আটক এবং হত্যার পর থেকেই রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে রাজপথে নামে হাজারও মানুষ। সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের প্রতিবাদ জানান তারা। নৈতিকতা পুলিশের হয়রানি বন্ধের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মাহশাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যান মাহশা। এরপর তিনদিন কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয় তার। পুলিশ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করলেও, পরিবার বলছে অসুস্থতার কোনো লক্ষণই ছিল না মাহশার। থানায় নেয়ার পথে তার মাথায় আঘাত করা হয় বলে দাবি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।
এ ঘটনায় আন্দোলন ছড়িয়েছে দেশের বাইরেও। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন সেখানে বসবাসরত ইরানিরা। মাহশার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্ক এবং নেদারল্যান্ডসেও। ঘটনাটি তদন্তের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে হিজাবে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির অনেক নারী। এমনকি মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের চুল কেটে এবং পরনের পোশাক খুলে ফেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। একাধিক শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহিংসতার কথায় জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি জানান, মাহশার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাতের তথ্য পেয়েছেন তারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগসহ পুরো বিষয়টি দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। তার পরিবার যেনো ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে ইরানে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই দেশটিতে বাধ্যতামূলক করা হয় নারীদের হিজাব পরা। ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ সরাসরি তদারকি করে বিষয়টি। ১৩ সেপ্টেম্বর হিজাব আইনের আওতায় আরও অনেকের সাথে আটক হন মাশা আমিনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মোরাল পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান মাশা।
/এডব্লিউ

