Site icon Jamuna Television

৫টি ফুটবল কেটে ফেলা প্রতিবেশীরাই গর্বিত শামসুন্নাহারকে নিয়ে

সাফ জয়ী ফুটবলার শামসুন্নাহার সিনিয়রের গল্প।

মামুনুর রশিদ:

কলসিন্দুর স্কুলের মাঠ সংলগ্ন পাশের বাড়িতে বল যাওয়ায় ৫টি ফুটবল কেটে ফেলেছিল প্রতিবেশীরা। সঙ্গে ছিল এলাকার মানুষের তীর্যক কথা। ছিল পরিবারের বাধা। সাফ জয়ী শামসুন্নাহার সিনিয়রের মাকেও শুনতে হতো কটূ কথা।

তবে সেসবকে পেছনে ফেলে এলাকাবাসীর গর্বের কারণ এখন এই ফুটবলার। নাচে-গানে হৈ-হুল্লোড়ে নিজেদের গ্রামে বরণ করে নেয়া হয় কলসিন্দুরের ফুটবলারদের। কিন্তু কয়েকবছর আগেও চিত্রটা ছিল ভিন্ন। ধেয়ে আসতো কটূ কথা, ধেয়ে আসতো কটূ দৃষ্টি। নানা অন্ধকারের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে এই নারী ফুটবলারদের; আর আজ তাদের বরণ করা হয় উৎসব আয়োজনে।

অন্ধকার কেটে এখন আলোকিত কলসিন্দুর, সেটাও শুধু এই নারীদের কারণে। তবে এখনও অতীত স্মৃতি পোড়ায় সাফ জয়ী শামসুন্নাহার সিনিয়রকে। এই কৃতি ফুটবলার বলেন, আমাদের পরিবার থেকে খেলতে মানা করা হতো। এলাকাবাসীও বলতো, মেয়ে মানুষের কীসের খেলা! মেয়ে মানুষের তো খেলতে নেই! খেলবে ছেলেরা। আমাদের বাড়িতে কাকারা ফুটবল খেলতো। তাদের সাথেই মাঝেমধ্যে খেলতাম। তারাও নিতে চাইতো না। সাইডে বসিয়ে রাখতো।

মেয়ের খেলা নিয়ে অমত থাকা শামসুন্নাহারের মাকেও শুনতে হয়েছে নানা কটূ কথা। সেই সুবাদে মায়ের হাতে দৌঁড়ানিও খেয়েছেন রক্ষণভাগের এই ফুটবলার। অবশ্য বিজয়ীর বেশে ফেরা মেয়ের জন্য ঠিকই পছন্দের হাঁস রান্না করেছেন মা। এ নিয়ে শামসুন্নাহার বলেন, আমার পছন্দের খাবার রান্না করেছেন মা। সামনে যে টুর্নামেন্টগুলো আছে, সেগুলোতে ভালো পারফর্ম করে দেশকে ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা করবো আমরা।

একসময় অন্যের জমিতে কাজ করা বাবা এখন মেয়েকে নিয়ে গর্ব করেন। শামসুন্নাহারের বাবা জানালেন, পুরো গ্রামবাসীই আনন্দিত। তিনি নিজেও আনন্দিত। আর শামসুন্নাহারের কাকা জানালেন, এই এলাকায় ৮ জন মেয়ে ফুটবলার। তারা যখন বাজারে যায় সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তাদের নিয়ে সবাই খুশি।

ফুটবল দিয়ে একটি গ্রাম থেকে গোটা দেশকে কীভাবে ভালোবাসতে বাধ্য করতে হয় সেটিই দেখিয়েছেন শামসুন্নাহাররা, দেখিয়েছে কলসিন্দুর।

/এম ই

Exit mobile version