Site icon Jamuna Television

বিশ্বকাপ আয়োজনে রাশিয়ার খরচ কত?

চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা। এ বিশাল আয়োজনে রাশিয়ার খরচ প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বা ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা ধরে); যা প্রায় বাংলাদেশের এক বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খরচের দুই তৃতীয়াংশের সমান।

এর বড় অংশটা অবশ্য ক্রীড়া অবকাঠামো তৈরিতে নয় বরং যোগাযোগ ও পরিবহন খাতেই ব্যয় হচ্ছে।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। তার জন্য স্টেডিয়ামটিকে ঢেলে সাজিয়েছে রাশিয়া।

বদলে ফেলা হয়েছে তার ভেতরকার চেহারা। ৭৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ধারণক্ষমতা নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৮১ হাজারে। এজন্য খরচ করা হয়েছে ৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

লুঝনিকির মতো পুরনো স্টেডিয়ামগুলোই নয়, বিশ্বকাপ সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে সামারা নিজনি নভগরদ, সেন্ট পিটার্সবার্গ, ক্যালিনিংগ্রাদ, ভলগোগ্রাদ, রোস্তভ-অন-ডনের মতো নতুন সব স্টেডিয়ামও।

পুরনোগুলোর সংস্কার আর নতুন নির্মাণ এমন ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে তোলার পেছনে রাশিয়ার খরচ ৪২০ কোটি ডলার; যা বিশ্বকাপ আয়োজনে দেশটির মোট ব্যয়ের ৩০ ভাগ।

খরচের অর্ধেকই অবশ্য যাচ্ছে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের উন্নয়নে। বিশ্বকাপ ভেন্যুগুলোর একেকটির গড় দূরত্ব ৪০০ মাইল।

সেখানে নির্বিঘ্নে যাতায়াতে বিমানবন্দর, সড়ক ও রেলস্টেশনগুলো ঢেলে সাজিয়েছে রুশ সরকার। এতে ব্যয় হয়েছে ৬৮৪ কোটি ডলার; যা রীতিমতো বাংলাদেশের দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের সমান।

ব্যয়ের বাকি ২০ ভাগ যাচ্ছে নিরাপত্তা, খাবার-দাবারসহ অন্যান্য খাতে। যার পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার।

সব মিলিয়ে এ আয়োজনে রাশিয়ার খরচের অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ১ লাখ ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যার ৭০ ভাগ বহন করছে রুশ সরকার, বাকিটা বেসরকারি খাত।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে শেষ পর্যন্ত তা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বা ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় ঠেকতে পারে।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের মোট ব্যয়ের তুলনায় এ অঙ্ক চার গুণ বেশি। রাশিয়া এ আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছিল ২০১৩ সালে থেকে।

সে হিসাবে বছরে ২ বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করেছে এ খাতে; যা দেশটির জিডিপির দশমিক ২ ভাগ।

দেশটির আশা আয়োজন দেখতে ১০ লাখ পর্যটকের পা পড়বে রাশিয়াতে। তারা গড়ে ৫ থেকে ৮ হাজার ডলার খরচ করলে দেশটির অর্থনীতিতে সরাসরি ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলার যোগ হবে।

এর বাইরে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে গত পাঁচ বছরে তা-ও দেশটির জিডিপিতে এক ভাগ অবদান রেখেছে বলে দাবি করেছে সরকার; যা সামনের দিনেও অব্যাহত থাকবে।

যদিও সামনের দিনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়াসহ কর্মসংস্থানের বাজারে চাপ ফেলার শঙ্কা রয়েছে দেশটির জন্য।

রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী আর্কদি দেভোরকোভিচ জানিয়েছেন, বিশ্বকাপই এখন রাশিয়ার সব ধরনের আর্থিক প্রবৃদ্ধির প্রাণভোমরা। যদিও বিশ্বকাপ ছাড়া রাশিয়া এসময়ে প্রবৃদ্ধির স্ফীতি দেখতে পেত না।

দুই বছর নিুমুখী থাকার পর এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও রুশ অর্থনীতি বিশ্বকাপের কারণে গত বছর দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে।

মার্কিন রেটিং সংস্থা মুডিসের গবেষণায় জানিয়েছে, বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে অর্থনৈতিকভাবে একধাপ এগিয়ে যাবে রাশিয়া।

লেখক:  ইকবাল হোসেন

Exit mobile version