Site icon Jamuna Television

মালয়েশিয়ায় অপহৃত বাংলাদেশি প্রবাসীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

হত্যার শিকার বাংলাদেশি প্রবাসী।

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:

মালয়েশিয়ায় অপহৃত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী সোহেল মিয়ার (৩৯) হাত-পা বাঁধা অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দক্ষিণ ধলাপাড়া গ্রামের মরহুম আহমেদ মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় ছিলেন তিনি। সেখানে একটি কারখানায় কাজ করতেন সোহেল।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সেলাঙ্গর রাজ্যের সেরিকামবাগানের তামিং জায়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংলগ্ন একটি কারখানার পেছনের জঙ্গল থেকে সোহেলের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় কাজাং থানা পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সোহেলের প্রবাসী স্বজনরা। শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সোহেলের মরদেহ শনাক্ত করেছে তার পরিবার।

এ নিয়ে মালয়েশিয়ার কাজাং ওসিপিডির সহকারী কমিশনার মোহম্মদ জাইদ হাসান বলেন, মরদেহটি আংশিকভাবে পঁচে গেছে এবং নিহতের হাত ও মুখ সেলোফেন টেপ এবং একটি সারং দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনি আরও জানান, অপহরণের ঘটনায় আটক ৪ প্রবাসী বাংলাদেশির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সূত্র ধরে সোহেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোহেলের মামা মিজানের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কাজাং থানা পুলিশ অভিযান শুরু করে।

এর আগে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মালয়েশিয়ার তামিলজায়া এলাকায় বাসার কাছ থেকে সোহেল মিয়াকে অপহরণ করা হয়। তাকে হত্যার হুমকি দেয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বরিশালের একটি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে অপহরণকারীদের দাবি করা ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণও পাঠায় সোহেলের পরিবার। কিন্তু তারপরও মুক্তি না পাওয়ায় মালয়েশিয়ায় দুটি এবং দেশে ১টি মামলা করে সোহেলের পরিবার। এ ছাড়াও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনেও সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে তার পরিবার।

কাজং পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ অক্টোবর বিকেলে বেরানং এলাকা থেকে দুই বাংলাদেশি এবং পরদিন সেমোনিয়া এলাকা থেকে আরও দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মামুন শিকদার ও আলমগীরের নাম প্রকাশ হলেও তদন্তের স্বার্থে বাকি দুইজনের নাম এখনও জানায়নি পুলিশ।

এদিকে, গত ৪ অক্টোবর বরগুনা থেকে মুক্তিপণের টাকাসহ নাসির উদ্দিন (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন র‍্যাব। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় সোহেল মিয়ার ভগ্নিপতী বিল্লাল হোসেনের দায়ের করা অপহরণ মামলার সূত্রে নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ঘাটাইল থানা পুলিশের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর কন্স্যুলার জিএম রাসেল রানা বলেন, ৪ অপহরণকারী গ্রেফতার এবং তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে সোহেল মিয়ার মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি মালয়েশিয়া পুলিশ প্রশাসন আমাদের নিশ্চিত করেছে। কী কারণে ও কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। অপহরণের ঘটনায় আরও কারা জড়িত রয়েছে তাদের গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে মালয়েশিয়া পুলিশ।

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, সোহেল মিয়া অপহরণ ও হত্যা ঘটনায় জড়িত চক্রের সকলকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে। প্রবাসে যারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। সোহেল মিয়ার অপহরণের পর থেকেই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রাখছে হাইকমিশন।

এসজেড/

Exit mobile version