Site icon Jamuna Television

কলসিন্দুর: মারিয়া মান্দা-সানজিদাদের অদম্য ইচ্ছায় বদলে যাওয়া এক গ্রাম

মামুনুর রশিদ:

সবুজ ছায়ায় ঘেরা, সরলতার মায়ায় বাঁধা, ফুটবলে বুদ হয়ে থাকা এক গ্রাম কলসিন্দুর। বইয়ের পাতায় নাম উঠা, বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে নেয়া গ্রাম কলসিন্দুর। সেই গ্রামের পথেই যমুনা টেলিভিশন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পথ। রাস্তায় জ্যাম না থাকলে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে। সেখান থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে ধোবাউড়া উপজেলা। পথে মুগ্ধ হবেন দারুণ রাস্তায় আর গ্রামীণ আবহাওয়ায়। তবে একটু ভিতরে গেলেই পোহাতে হবে রাস্তার ঝক্কি। সেই ঝক্কি পেরিয়ে কলসিন্দুর যেতে পাড়ি দিতে হবে আরো ৬ কিলোমিটার। তবে সেই রাস্তাটা আপনাকে দিবে আরো বেশি এবড়ো-থেবড়ো স্বাদ। রাস্তার ঝামেলায় অবশ্য বেশিক্ষণ মন দেয়ার সুযোগ নেই। দু’পাশ ঘিরে গ্রামীণ সবুজ আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো টেনে নিয়ে যাবে। আপন মনে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠবেন গান। গাইতে গাইতে কলসিন্দুর বাজারে ঢোকার আগেই রাস্তার পাশ ঘেঁষে দেখতে পাবেন সানজিদা আক্তারের বাড়ি। সেই বাড়ি পেরোলেই কলসিন্দুর বাজার। মূলত এই বাজারকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠা কলসিন্দুর গ্রামের মানুষদের। এই বাজারের কাছেই কলসিন্দুর প্রাইমারি স্কুল কলেজ। যেখান থেকে উঠে এসেছেন আজকের মারিয়া মান্দা, সানজিদা, তহুরা, শামসুন্নাহাররা।

জমির আইল কিংবা মাটির রাস্তা কিংবা নদী পার হয়ে দলবেঁধে স্কুলে যাচ্ছে কিশোর কিশোরিরা। কেউ ইউনিফর্মে কেউবা বোরখায়। কোথাও কোনো বিভেদ চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না সন্দিহান চোখের আনাগোনা। এখানে সবাই সহজ , সবাই বন্ধু, সবাই আপনজন। কলসিন্দুরের মতো এমন গ্রাম থেকেইতো বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের উঠে আসা। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষগুলো এমন গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন। হয়েছেন পথ প্রদর্শক। এমন সব গ্রামের প্রতিনিধিত্ব যেনো করছে কলসিন্দুর। আরেকটু ভিন্নভাবে বললে অচেনা-অজানা এক গ্রামকে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সাফ জয়ী ফুটবলাররা।

একটা সময় ছিলো এই গ্রামে মেয়েদের ফুটবল মানেই দৃষ্টিকটু। ভেসে আসতো কটু কথা। স্কুলের শিক্ষক, নারী ফুটবলার এবং তাদের পরিবার কেউই বাদ যাননি এই গ্লানি থেকে। অনেকের পরিবার থেকেই চায়নি মেয়ে খেলাধুলা করুক। সেই সময়টা মনের জোরে একরকম যুদ্ধ করেই পার করেছেন সানজিদা-তহুরারা। দৃশ্যপট বদলেছে। সাফ জয়ী নারীদের পরিবারগুলো এখন গর্ব করে। গর্ব করে কলসিন্দুরের প্রতিটা মানুষ। গর্ব করে বাংলাদেশ। তাদের ঘিরেই চায়ের কাপে ঝড় উঠে একসময় চোখ বাঁকানো দোকানগুলোতে। তাদের মাহাত্ম্য আর গুণগানে আড্ডা চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একেকজন হয়ে উঠেন ফুটবল বোদ্ধা। আলোচনা হয় নারী ফুটবলে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার।

তাদের সাহসিকতাতেই বাংলাদেশ নারী ফুটবলের জন্য কলসিন্দুরে তৈরি হচ্ছে এরকম আরো অনেক মারিয়া মান্ডা, শামসুন্নাহাররা। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপে জেলা পর্যায়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবারের দলটি। একটি গ্রাম একটি দেশের ফুটবলের চিত্র কীভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে সেটির বড় উদাহারণ হয়ে থাকবে কলসিন্দুর। সাহসিকতা আর অদম্য ইচ্ছায় যে এনে দিতে পারে আমূল পরবির্তন সেটিই করে দেখিয়েছে কলসিন্দুরের মেয়েরা।

লেখক: রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন।

Exit mobile version