Site icon Jamuna Television

সেতু নেই নৌকাই ২০ গ্রামের মানুষের ভরসা

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা

এক পারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, অন্যপারে রংপুরের মিঠাপুকুর। ঘাঘট নদীর এই দুই পারের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় বহুবছর ধরে কখনো নৌকা আবার কখনো সাঁকোতে ঝূঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ। বছরের পর বছর এভাবেই দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে সুন্দরগঞ্জ ও মিঠাপকুর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শেষ সীমানায় প্রবাহিত ঘাঘট নদী। নদীটি দুই উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এই দুই পারের মানুষের সরাসরি স্থল যোগাযোগ কোন ব্যবস্থা না থাকায় নদী পথেই তাদের যাতায়াত করতে হয়। সুন্দরগঞ্জের সাতগিরী গ্রাম ও মিঠাপুকুরের মির্জাপুর গ্রামের ঘাঘট নদীর ওপর সেতু না থাকায় পারাপারে একমাত্র ভরসা নৌকা। বহুবছর ধরে বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয় হাজারো মানুষকে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সুন্দরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলার মানুষকে নদী পার হয়েই যেতে হয় শহর, বন্দর, হাট-বাজার, অফিস-আদালতসহ স্কুল-কলেজে। ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী দুই পারের হাজারো মানুষের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতার কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর দাবি জানালেও পেয়েছে শুধু জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস। রংপুর বিভাগীয় শহর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে যেতে দুই পারের মানুষের বিকল্প পথ নেই। এ কারণে হাজারো মানুষকে নদী পারাপার হতে হয় নিতান্তই বাধ্য হয়ে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের।

শিক্ষার্থী আফজাল, সুমন মিয়া বলেন, ‘ব্রিজের অভাবে নদী পারাপারে তাদের কষ্ট করতে হয়। প্রতিদিন স্কুলে যেতে তাদের নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে না পারায় লেখাপড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে’।

ব্যবসায়ী আনোয়ার মিয়া, মোনতাজ উদ্দিন বলেন, ‘উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে নৌকা পার হয়ে হাট-বাজারে যেতে হয়। কিন্তু রিকসা, ভ্যান বা বাইসাইকেল বোঝাই করে এসব পণ্য পারাপার করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। তাছাড়া বিকল্প পথে ঘুরে হাটে যেতে অতিরিক্ত অর্থের সাথে সময়ও নষ্ট হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে তাদের আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এভাবে নৌকা পারাপারে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও’।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল হক রেজা বলেন, ‘এই খেয়া নৌকা পারাপার শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের উপযোগী না হওয়ায় দুই বছর আগে স্থানীয়দের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসী। কিন্তু গত বছর প্রবল বন্যায় ব্রিজটি ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এলাকার মানুষের যোগাযোগ উন্নয়নে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ প্রয়োজন’।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘দুই উপজেলার সীমানা ঘেঁষে নদীর অবস্থানের কারণে সেতু নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা। তবে আর কোন আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি নয়। হাজারো মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ব্রিজ নির্মাণে বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। বরাদ্দ পেলেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে’।

এলাকাবাসীর দাবি, এই সেতুটি নির্মাণ হলে দুই উপজেলার মানুষের উন্নত যোগাযোগের সাথে বাড়বে সু-সম্পর্ক। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন ও কৃষকদের উৎপাদিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারজাত করণেও দুর্ভোগ কমবে।

Exit mobile version