Site icon Jamuna Television

চুয়াডাঙ্গায় টাকা ছাড়া মিলে না পাসপোর্ট, সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে ঘুষ-দুর্নীতির জাল

আখলাকুস সাফা ও জিসান আহমেদ:

বৈধ প্রক্রিয়ায় কেউ-ই নাকি পাসপোর্ট করতে পারেন না। নাম সংশোধনে দিতে হয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা, আর জন্ম তারিখ বদলাতে ৫০ হাজার টাকা! নতুন পাসপোর্ট করতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়! তুঘলকি এ কাণ্ড চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের।

এসব সেবা দিতে নির্দ্বিধায় ঘুষ নেন অফিস প্রধান, সহকারী, আনসার এমনকি দারোয়ানও। পুরো অফিসের আশপাশে দালাল সিন্ডিকেটের রয়েছে বিরাট জাল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নতুন পাসপোর্ট করতে সরকারি ফির বাইরে গুণতে হয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর পাসপোর্ট তথ্য সংশোধন করতে হলে ঘুষ নিতে ঝাপিয়ে পড়েন অফিস দারোয়ান থেকে খোদ সহকারী পরিচালক।

বৃষ্টি খাতুন নামের এক নারী গেলো ১৬ আগস্ট পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেন। যা পেতে ইতোমধ্যে খরচ করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

বৃষ্টি খাতুন বলেন, ১ মাস ১০ দিনে পাসপোর্ট পাবো বলেছিল। এখনও পাইনি। চলতি মাসের ১৬ তারিখ আসলে ৩ মাস হবে।

আবেদনকারীর ছদ্মবেশে গত ১ নভেম্বর সহকারী পরিচালক মাহমাদুল আলম চৌধুরীর রুমে যায় যমুনা নিউজের টিম। পাসপোর্টে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কী কী লাগবে জিগ্যেস করা হলে তিনি জানান, এটা কোনো ব্যাপারই না।

কিছুক্ষণ পর যমুনা নিউজের টিমকে ভবনের তৃতীয় তলায় সিসিক্যামেরার আড়ালে নিয়ে যান এই কর্মকর্তা। চেয়ে বসেন ৫০ হাজার টাকা! জানান, লাগবে না কোনো এফিডেভিট বা পুলিশ রিপোর্ট। বলে দেন, ঘুষের টাকা যেন অফিস সহকারী কাজী মিজানুর রহমানের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।

পরে যমুনা নিউজের টিম নিজেদের পরিচয় দিলে তৃতীয় তলায় হওয়া কথোপকথন ভুলে যান মাহমাদুল আলম চৌধুরী। যদিও গোপন ক্যামেরায় ধরে পড়ে তার এসব কথাবার্তা।

এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভর্তি থাকে লোকে, তবে এর বেশিরভাগই আবেদনকারী নন। বাইরের ফটোকপি দোকানের মালিক-কর্মচারী।

যে আবেদনের জন্য সহকারী পরিচালক অর্ধ লাখ টাকা চান, সেটির জন্য এক দোকানদার চাইলেন ৩২ হাজার টাকা। গ্যারান্টিও দিলেন ১ মাসে পাসপোর্ট দেয়ার; পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নাকি তার যোগাযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সহকারী পরিচালক মাহমাদুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে দুর্নীতির এ বিশাল জাল। ঘুষের টাকা সমন্বয় করেন অফিস সহকারী মিজান। দরকারি কাগজপত্র ছাড়াই সার্ভারে সেসব আপলোড করেন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মাসুদ। পাসপোর্ট করতে আসাদের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে দেয়া আনসার সদস্যদের কাজ ।

এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মাহমুদুল আলম চৌধুরী দাবি করেন, তার চেয়ে সৎ আর সহযোগিতাপরায়ণ কেউ নেই।

এদিকে, দালাল চক্রের সদস্যরা যখন তখন ঢুকে পড়েন ছবি তোলা, ফিঙ্গার স্ক্যানিংয়ের গোপনরুমে। করেন অনধিকার চর্চা। মাহমুদুল আলম চৌধুরীর দাবি, বাইরে পাসপোর্ট অফিসের কোনো কাজ হয় না। চাক্ষুস দেখাতে দালাল-আস্তানায় নিয়ে গেলে তাদের পক্ষেই সাফাই গাইলেন তিনি।

মাহমাদুল আলম চৌধুরীর এসব কর্মকাণ্ড রাজ্য হয়ে গেলে অনিয়ম তদন্তে গত ৩ নভেম্বর সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়।

/এমএন

Exit mobile version