Site icon Jamuna Television

কপ ২৭: মিলছে না প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ


মাহফুজ মিশু, শারম আল শেইখ ( মিসর) থেকে:

মিসরের সীমান্তবর্তী শহর শারম আল শেইখে কেমন যেন উৎসব উৎসব ভাব। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা জেগে আছে এই শহর। দুই শতাধিক দেশের সরকারি প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন কর্মী, তরুণ জলবায়ু কর্মী আর গণমাধ্যম কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত এখন মরুর এই দেশ। চলছে নানা নেগোসিয়েশন, পরিবর্তন- পরিমার্জন। ১৮ নভেম্বর সমাপনী দিনে আসবে শার্ম আল শেইখ ডিক্লারেশন। সেখানে কী থাকবে, কী থাকবে না, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থ কতখানি রক্ষা হবে, ক্ষতিপূরণ কে বা কারা দেবে, তার বণ্টন কী হবে- সবই আছে আলোচনা আর নেগোশিয়েশনের টেবিলে।

যুক্তরাষ্ট্র এবারের সম্মেলনে বেশ সক্রিয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসে গোটা পৃথিবীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি সবাই। নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ইতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ভাবনার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে জার্মানি ফ্রান্সসহ ইউরোপের অনেক দেশ। কাজেই যাই হোক, অন্তত কথায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বছরে দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্ররা এখন অঙ্গীকারবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ূ বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে কেবল নিজেদের অবস্থানই পরিষ্কার করেননি, বলেছেন, অন্য দেশ যারা অনেক কার্বন নিঃসরণ করে, তাদেরও এই অঙ্গীকারে আনতে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে চেষ্টা করতে হবে। যদিও শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশেষ করে চীনের মতো পরাশক্তির অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়, আরো অনেক দেশের মতোই।

প্রশ্ন হলো তাহলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কী হবে? সব লক্ষণ বলছে, অন্যবারের মতো এটি নিয়ে কালক্ষেপণই হতে যাচ্ছে এবারো। যদিও স্বাগতিক মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজের’ বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত হওয়ায় কপ ২৭ নিয়ে বেশ আশাবাদী। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটের বাস্তবতায় এবার বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ রিনিউয়েবল এনার্জি গ্রিডে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর মোমেন। যদিও বিষয়টা এখনো খুব বেশি স্পষ্ট নয় কারো কাছেই। মানে হলো, এতে যুক্ত হলে কী হবে, সম্ভাবনা বা চ্যালেঞ্জ কী, অর্থায়নের বিষয় অনেক কিছুই ধোঁয়াশা এখনো। গ্লোবাল মিথেন প্লেজড- যুক্তরাষ্ট্রের এই বৈশ্বিক উদ্যোগে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে একশ রাষ্ট্র। মূলত মিথেন নিঃসরণ কমাতে এই উদ্যোগ ওয়াশিংটনের। মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই উদ্যোগেও যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। যদিও চলমান কৃষি উৎপাদন, সারের ব্যবহারসহ দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু পাল্টাতে হবে বাংলাদেশকে এজন্য। সেক্ষেত্রে বিকল্প কী ব্যবস্থা সরকার নেবে, বা যে উদ্যোগ নেয়া হবে তা কতটা সাশ্রয়ী, কৃষক বান্ধব সে সব বিষয়াদি যাচাই বাছাই করা হয়েছে কি না, তা জানা নেই।

সব মিলিয়ে জলবায়ু সম্মেলন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মতো ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ ও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য এবারো কোনো সুখবর দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় থেকেই যাচ্ছে।


লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।

Exit mobile version