Site icon Jamuna Television

সমকামিতায় বাধ্য করাতেই খুন হন বালু ব্যবসায়ী কাউসার: পুলিশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

সমকামিতায় বাধ্য করাতেই খুন হয়েছেন ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের এম কে ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা বালু ব্যবসায়ী মো. কাউছার খান (৪১)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিফাত (১৬) নামের এক কিশোর এবং তার পিতা মো. শাহিন মোল্লাকে (৫০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটককৃতদের বাড়ি চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের বি এস ডাঙ্গী গ্রামে।

রোববার (২৭ নভেম্বর) বিকালে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।

পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, কাউছার হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পেয়েই আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, চরভদ্রাসন থানা পুলিশ এবং ডিবির অফিসার ইনচার্জ পর্যাপ্ত সংখ্যক অফিসার ফোর্সসহ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উন্মোচনের জন্য অভিযান পরিচালনা শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তকালে সাফাওত ইসলাম সিফাত ও তার পিতা মো. শাহিন মোল্লাকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাফাওত ইসলাম সিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তার কাছ থেকে নিহত কাউছারের মোবাইলের পোড়া অংশ বিশেষ, গায়ে পরিহিত জ্যাকেট ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সিফাত জানায়, কাউছারের সাথে সাফাওত ইসলাম সিফাতের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল এবং এই সম্পর্ক গড়তে কাউছার তাকে বাধ্য করেছিল। কাউছার প্রায়ই তাকে ওই অনৈতিক কাজে বাধ্য করতো। যা সিফাতের মোটেই পছন্দ ছিল না। কাউছার তাকে এই কাজে মিলিত হতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো।

পুলিশ সুপার সিফাতের বরাত দিয়ে জানান, কাউছার শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে সিফাতকে ফোন করে ডেকে উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরা এলাকায় বালুর স্তূপের কাছে নিয়ে যান। সেখানে সিফাতকে সমকামিতা কাজে বাধ্য করলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কাউছার তার পকেট থেকে সুইচ চাকু বের করে সিফাতকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে সিফাত তার হাত ধরে ফেলে এবং উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কাউছারের গলায় চাকুর আঘাত লাগলে কাউছার মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। এ সময় কাউছারের হাত থেকে সিফাত চাকু কেড়ে নিয়ে কাউছারের পিঠের ওপর বসে তার পিঠ, গলা, গর্দান, মাথার পিছনের অংশে উপর্যুপরি আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে কাউছারের মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল এবং চাকু নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, সিফাত বাড়িতে ফিরে গেলে তার মা-বাবা তার গায়ের রক্ত মাখা কাপড় চোপড় দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে তাদেরকে সবকিছু খুলে বলে। সিফাতের বাবা শাহিন মোল্লা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত ধ্বংস এবং মুছে ফেলে মামলার মোড় ভিন্ন দিকে ঘোরানোর জন্য তার ছেলে সিফাতের পরিহিত জামা কাপড় ধুয়ে ফেলে, জ্যাকেট বসত বাড়ির মাটির মধ্যে পুঁতে ফেলে এবং কাউছারের মোবাইল পুড়িয়ে ফেলে। চাকু তার বাড়ির পাশে পুকুরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে এবং মোটরসাইকেল জেলা সদরের চানমারি এলাকায় রেখে আসেন। পুলিশ আলামতগুলো জব্দ করেছে।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিন্টু মন্ডল জানান, কাউছার খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই লিয়াকত খান বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত সিফাত ও তার পিতা মো. শাহিন মোল্লাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরা এলাকায় বালুর স্তূপের ওপর থেকে বালু ব্যবসায়ী মো. কাউছার খানের (৪১) লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। নিহত বালু ব্যবসায়ী কাউছার খান সদর ইউনিয়নের এম কে ডাঙ্গী গ্রামের মৃত জালাল খানের ছেলে। তিনি বিবাহিত। তার দুটি মেয়ে রয়েছে।

ইউএইচ/

Exit mobile version