Site icon Jamuna Television

সাদুল্যাপুর-নলডাঙ্গা-বামনডাঙ্গা সড়কের বেহাল অবস্থা

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর থেকে নলডাঙ্গার ও নলডাঙ্গা থেকে বামনডাঙ্গা সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় পিচ-কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের।

গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দুটির বেহাল দশায় দুর্ভোগ বেড়েছে সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর উপজেলার মানুষের। ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে চলাচলে যান্ত্রিক ক্রটিসহ প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন এ অঞ্চলের জনগণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা শিববাড়ী মোড় থেকে নলডাঙ্গা হয়ে সাদুল্যাপুর সড়ক পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার লম্বা, যা ভেঙেচুরে ও পিচ-কার্পেটিং উঠে গিয়ে অসংখ্য গর্তে একাকার হয়েছে।

নলডাঙ্গা ও বামনডাঙ্গায় রেল স্টেশন হওয়ায় যোগাযোগ আর ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে এ সড়ক দুটি দিয়ে রংপুর, গাইবান্ধা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষ। প্রতিদিন এ সড়ক চলাচল করে ঢাকাগামী বেশ কিছু যাত্রীবাহী বাস।

তাছাড়া সড়কে অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী এ এলাকার মানুষের।

নলডাঙ্গার বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কের জায়গায় জায়গায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নলডাঙ্গা যাওয়ার সড়কের দামোদরপুর উচু ব্রিজ এলাকা, ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন, বাজারের সিএনজি স্ট্যান্ড ও ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের অবস্থা একেবারে বেহাল। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলোতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। কোথাও কোথাও দেবে গিয়ে পুকুর ও খাদে ভেঙে পড়ছে সড়কের অংশও। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভাঙা সড়ক দিয়ে চলাচলে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কান্তনগর বাজারের ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এভাবে চলাচলে প্রতিনিয়ত গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে দ্বিগুণ। তাছাড়া মালামাল আর পণ্যে সামগ্রী আনা নেয়া করতেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় সড়কের গর্তে যানবাহন উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সড়ক সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের’।

নলডাঙ্গা স্টেশন এলাকার বাসিন্দা জিতু, শরিফ ও মাসুম মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে সড়কে। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। সামান্য বৃষ্টি হলেই সিএনজি স্ট্যান্ডে হাটু পানি জমে। আবার বৃষ্টি কমলে কাদায় পরিপূর্ণ হয় এতে পায়ে হেটে চলাও কষ্টকর হয়। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে ইট-বালু ফেলে গর্ত ভরাটসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেও ভোগান্তি কমছে না কিছুতেই। বর্তমানে বর্ষায় সড়কে চলাচলে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে যাত্রী সাধারণসহ চালকদের’।

অপরদিকে, নলডাঙ্গা বাজার থেকে গোডাউন মোড় হয়ে বামনডাঙ্গার শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত সড়ক জুড়ে দেখা মিলবে পিচ-কার্পেটিং উঠে গর্ত আর খানাখন্দের দৃশ্য। সড়কের অধিকাংশ জায়গায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ভোগান্তির সাথে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষরা। ঝুঁকিপূর্ণ এ সড়কে চলাচলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। পাশাপাশি সড়কে যানবাহনে যান্ত্রিক ক্রুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চালকরাও।

নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম তরিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে মানুষের দুর্ভোগের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে ও এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য হাট-বাজারে বিক্রি করতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। সড়ক পাকা করতে বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে তালবাহনা করেন। চলতি বছরের জুন মাসে ৭ কিলোমিটার সড়ক পাকা করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখনো পাকা করার কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত সড়ক পাকা হলে এ অঞ্চলের মানুষের উন্নত যোগাযাগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি হবে’।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে বামনডাঙ্গা থেকে নলডাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কাজের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন। বর্ষা পার হলেই কাজ শুরু হবে’।

নলডাঙ্গা সড়ক সংস্কারের বিষয়ে সাদুল্যাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাদুল্যাপুর থেকে নলডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। এ সড়কের প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার অংশ সংস্কারে টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য টেন্ডারের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি অনুমোদনের অপেক্ষায়। বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে সংস্কার হবে সড়কটি। আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে কাজ শুরু করা সম্ভব বলে জানান তিনি’।

বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগের সমাধান চান ভুক্তভোগীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সড়ক সংস্কারে পদক্ষেপ নিবে এমনটাই প্রত্যাশা এ অঞ্চলের মানুষের।

সাদুল্যাপুর উপজেলা থেকে নলডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত সড়কের দুরত্ব ১১ কিলোমিটার। আর সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা থেকে নলডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। স্থানীয় সরকার ও এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সড়ক দুটি সর্বশেষ সংষ্কার হয়েছিলো বছর চারের আগে।

Exit mobile version