Site icon Jamuna Television

ব্রীজের নিচে আশ্রয় নেয়া সেই পরিবারটি কুড়িগ্রামে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

ঢাকায় কলাবাগান ওভার ব্রীজের নিচে আশ্রয় নেয়া অসুস্থ মা, তার স্বামী ও সন্তানদের অবশেষে ঠাঁই হলো কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নে।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় পরিবারটিকে সদর ইউএনও আমিন আল পারভেজ, এনডিসি সুদীপ্ত কুমার সিংহ এবং কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. আহসান হাবীব নীলু তাদেরকে পাঁচগাছিতে নিয়ে যান।

এর আগে রাতের কোচে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির মহাসচিব সাদুল আবেদীন ডলার। সকাল ৭টায় পরিবারের সদস্যরা কুড়িগ্রাম শহরে পৌঁছলে তাদেরকে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হয়। এখানে জীবনের গল্প শোনান ফরিদা বেগম (৪০) ও তার স্বামী আনছার আলী (৬০)।

সন্তানসহ পুরো পরিবারটি কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে আসলে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র দেন সিভিল সার্জন ডা: এসএম আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম। এ সময় প্রাথমিকভাবে পরিবারটির খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, লবণসহ সমস্ত উপকরণ সরবরাহ করেন কুড়িগ্রাম রেল-পরিবেশ যোগাযোগ উন্নয়ন গণকমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম ।

জেলার উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর মৌজার মরাকাটি গ্রামে বাড়ি ছিল ফরিদার স্বামী আনছার আলীর। ছিল দুই একরের বেশি ধানী জমি। দুধের ব্যবসা করে ভালই চলছিল পরিবারটি।

চরের মধ্যে প্রতিদিন দুই মণ করে দুধ সংগ্রহ করে ১৫ কি.মি. সাইকেল পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম শহরের হোটেল গুলোতে দুধ বিক্রি করতেন তিনি। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে ২০১৬ সালে একমাসের মধ্যে বাড়িঘর, আবাদি জমি সব বিলীন হয়ে যায়। শেষে আশ্রয় মেলে ইসলামপুরে জ্যাঠাত ভাইয়ের গোয়াল ঘরে। সেখানে একমাস থাকার পর ঢাকায় চলে আসেন ফরিদার পরিবার।

ফরিদা বেগম জানান, অভাব-অনটন আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে তারা নভেম্বর মাসে ঢাকায় পাড়ি দেয়। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শেষে আশ্রয় নেয় কলাবাগান ওভার ব্রীজের নিচে পলিথিনের তাবু টানিয়ে বসবাস করতেন তারা।

ধানমণ্ডি ক্রীড়া চক্রক্লাবের দারোয়ান জামালের সহযোগিতায় মাঠের পাতা কুড়ার কাজ করে দিনে দুশো থেকে আড়াইশ টাকা আয় করতেন ফরিদা। সেই অর্থেই চলছিল মানবেতর জীবন যাপন। মাঝখানে কাজটাও বন্ধ হয়ে যায়। এসময় না খেয়ে থাকতে হচ্ছিল পরিবারটিকে। সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজেই ভিক্ষাবৃত্তি করতে বেরিয়ে পড়েন ফরিদা বেগম।

তিন সন্তানের মধ্যে আকলিমা (১১) একজন প্রতিবন্ধী (বামন) এবং সাড়ে তিন বছরের ছোট ছেলে ফরিদুল ইসলামকে নিয়ে তারা থাকতেন। দ্বিতীয় কন্যা আখিতারা (৭) থাকত গ্রামের বাড়িতে চাচীর কাছে।

ফরিদা বেগম আরো বলেন, ঘটনার দিন দু’সন্তানকে নিয়ে কলাবাগান থেকে ল্যাব এইডের দিকে ভিক্ষা করতে বের হন তিনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হওয়ার কারণে ল্যাব এইডের কাছে অসুস্থ হয়ে ফুটপাতেই পড়ে যান তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এ পরিবারটির জন্য অস্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি নিশ্চিত করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নির্দেশে তাঁদের তিন সন্তানকে স্কুলে ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, সরকার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সকলের উচিত সরকারের এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ানো। অসহায় ফরিদার পরিবারকে জমিসহ স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। একই সাথে করা হবে কর্মসংস্থানের।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. আহসান হাবীব নীলু জানান, জেলায় বন্যা আর নদী ভাঙনে প্রতি বছর শত শত পরিবার বাড়ি ভিটা হারাচ্ছে। নদী তীরবর্তী উন্মুক্ত এলাকায় নদী শাসনের ব্যবস্থা না করায় বানভাসী ও গৃহহীনদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফরিদার মতো হাজারও মানুষ এখন বড়বড় শহরের পথে ঘাটে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব মানুষদের পুণর্বাসন করা জরুরী।

Exit mobile version