২০২২ সাল জুড়েই অস্বস্তি তৈরি করেছে পণ্যমূল্য। আমদানি করা পণ্যের ঘাটতিতে হু হু করে বেড়েছে দাম। চাল, আটা, তেল, চিনি থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না যার দাম বাড়েনি। গেল আগস্টে নিকট অতীতের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছে দেশের মানুষ; যার হার সাড়ে ৯ ভাগের বেশি। নতুন বছরেও স্বস্তির তেমন আভাস নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি শৃঙ্খলা আনতে হবে বাজার ব্যবস্থাপনায়।
চাল, চিনি, তেল কিংবা আটা- ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে ক্রেতার প্রয়োজনীয় এসব পণ্য। বছর জুড়েই মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পণ্যমূল্য। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসেব মেলাতে অনেকেরই হিমশিম খেয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, চাহিদার তুলনায় কম খাচ্ছে অনেক মানুষ।
দাম নাগালের বাইরে, তাই কমে গেছে পণ্যের চাহিদাও। ভোগ্যপণ্য বিক্রি করেন যারা, তাদেরও চোখেমুখে দুশ্চিন্তা। বিক্রেতারা বলছেন, আগে যারা মাসে ১০ হাজার টাকার বাজার করতো, এখন তারা ৬ বা ৭ হাজার টাকার বাজার করেন।
এ বছরের পুরোটা জুড়েই স্বল্প ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে সংকটে ফেলেছে মূল্যস্ফীতি। মূলত বছরের শুরু থেকেই ছুঁটতে থাকে দামের পাগলা ঘোড়া। মার্চ মাস থেকে ধীরে ধীরে লাগামহীন হতে থাকে মূল্যস্ফীতির সূচক। নিকট অতীতের মধ্যে গত আগস্টে সর্বোচ্চ দামের উত্তাপ দেখেছে মানুষ। বছর শেষে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও আসেনি স্বস্তি।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন আরও গভীর হয়েছে। মূল্যস্ফীতি অবশ্যই বেড়েছে, এটা আগামীতে আরও কতোটা বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সাময়িক মুল্যস্ফীতি হলে না হয় ভর্তুকি দিয়ে চালানো যেতো। কিন্তু, এটা যদি চলতেই থাকে তাহলে ভর্তুকি দিয়ে আপনি এটা আর কতোদিন চালাবেন?
টিসিবির হিসেব বলছে, সব ধরনের চালের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ থেকে ৬ ভাগ। দ্বিগুণের বেশি হারে বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। ডাল, চিনি ও তেলের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, ভোগ্যপণ্যের দামও এখন আকাশচুম্বী।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতির বিশাল চাপ। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তাহলে সার্বিক যে চাহিদা তারও কিন্তু পতন ঘটবে। এখন কেউ উন্নতির কথা চিন্তা করছে না বরং তারা চিন্তা করছে টিকে থাকার। টিকে থাকার পরিস্থিতিটা যেন ভালোভাবে হয় অর্থাৎ, বেশিরভাগ লোক যেন টিকে থাকতে পারে, মাথা উঁচু করে থাকতে পারে সেদিকটাতে সরকারের নজর দেয়া উচিত।
সংকট থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আর সেদিকেই জোর দিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, খাদ্যের সংস্থান করতেই হবে, তারপর অন্য আলাপ। খাদ্য আমরা আমাদেরটা উৎপাদন করি বটে, কিন্তু এদেশে দিন এনে দিন খায় অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষ। কাজ করলে খাবার আছে, না করলে নেই।
এজন্যই বলা হচ্ছে, নতুন বছরে নিশ্চিত করতে হবে পণ্যের সরবরাহ। বাজার ব্যবস্থায় আনতে হবে শৃংখলা।
/এসএইচ
Leave a reply