Site icon Jamuna Television

সৌদিতে নির্যাতিত বাংলাদেশি নারী; জেলে সন্তান প্রসব, হারিয়েছেন মানসিক ভারসাম্য

বর্তমানে ব্র্যাকের সেইফ হোমে অবস্থান করছেন ভূক্তভোগী ও তার সন্তান।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন পরিবারের ভাগ্য বদলের আশায়। কৃষক বাবার পরিবারে স্বচ্ছলতা আনার বাসনা ছিল তার। মাঝে কয়েক বছর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায়, বাবা-মা ধরেই নিয়েছিল বেঁচে নেই তাদের আদরের কন্যা। কিন্তু, সম্প্রতি ফিরে এসেছেন তিনি। সাথে ফুটফুটে একটি শিশু সন্তান। একজনকে সামলাতে হিমশিম খাওয়া পরিবারটি এখন বেকায়দায় কন্যা ও তার সন্তান নিয়ে।

ধরা যাক, ভুক্তভোগী এ নারীর নাম জোহরা। দালালদের প্ররোচনায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ২০১৫ সালে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। চার মাস না যেতেই সেখানে তার ওপর শুরু হয় শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। একটা পর্যায়ে পরিবারের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় জোহরার। জোহরার বাবা-মা ধরেই নিয়েছিলেন, তাদের মেয়ে হয়তো আর বেঁচে নেই।

ভুক্তভোগীর বাবা বললেন, দালাল আমাকে বলেছিল যে- তোর মেয়ে ওখানে গিয়ে বাসার কাজ করে তোকে টাকা পাঠাবে। ও যাওয়ার পর ৪ মাসের বেতন পাঠিয়েছিলো। এরপর আর যোগাযোগ ছিল না। আমি দালালকে বললাম আমার মেয়েকে দিরিয়ে এনে দেয়ার জন্য। দালাল শুধু বলতো- দুই মাস পর আসবে। এই বলতে বলতে আজ ১৫ বছর পার হয়েছে।

জোহরা একা নয়, সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন অবুঝ, নিষ্পাপ এক সন্তান নিয়ে। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা টের পেতে আরও ক’বছর লাগবে তার। গত সপ্তাহে ঢাকা এলেও জোহরার সাথে নেই কোনো পাসপোর্ট। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, বুঝিয়ে বলতে পারেননি কিছুই।

পরে, এপিবিএন বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের শরণাপন্ন হলে, তারা তথ্য-বিশ্লেষণ করে বের করে এই নারীর নাম-ঠিকানা। কর্মকর্তারা জানান, শারীরিক নির্যাতনের পর গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হলে, সৌদি মালিকরা নানা ছুঁতোয় এসব নারীকে পাঠিয়ে দেয় সেখানকার সফর জেলে। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন জোহরা।

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সেক্টর স্পেশালিস্ট এম রায়হান কবির বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর সে ওখানে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, প্রেগনেন্ট হয়। ওই সময়ই তার মালিক তাকে কোনো একটা অভিযোগে জেলে পাঠিয়ে দেয়। ওই জেলেই সন্তান প্রসব করে সে। এই মুহূর্তে মানসিকভাবে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে সে। সত্যি বলতে, সে নিজেই একটা বাচ্চা। আরেকটা বাচ্চাকে সামলানোর অবস্থায় সে নেই।

জোহরার বাবা, দালাল এবং রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স বি.এস ইন্টারন্যাশনাল শাস্তি চেয়েছেন। জোহরা ও তার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে ব্র্যাকের সেইফ হোম।

/এসএইচ

Exit mobile version