Site icon Jamuna Television

ওজিলের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট!

বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে মেসুত ওজিলের অপ্রত্যাশিত অবসরকে মেনে নিতে পারছেন না বিশ্বজুড়ে থাকা তার ভক্তরা। তবে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হোয়েনেস এই তারকা ফরওয়ার্ডের অবসরে খুব খুশি। সেই আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি একইসাথে ওজিলের ওপর নিজের গোস্বাও ঝাড়লেন তিনি।

আর্সেনাল ফরওয়ার্ড ওজিল সম্পর্কে সোমবার হোয়েনেস বলেন, ‘ও অবসরে যাওয়ায় আমি খুবই খুশি। গত কয়েক বছর ধরে ওর খেলা ছিল আবর্জনার সমতুল্য। সর্বশেষ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের আগে ভালো খেলেছিলো। এরপর থেকে তো সে ওই ফটোর পেছনে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। এই ক’বছর ধরেই তার জাতীয় দলে থাকার কথা ছিল না।’

ফটো বলতে হোয়েনেস তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে ওজিলের তোলা একটি ছবিকে বুঝিয়েছেন। কয়েক মাস আগে নিজের পিতৃভূমি তুরস্ক সফরের সময় সে দেশের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ওজিল। এরপরই জার্মানিতে তাকে নিয়ে উগ্র ডানপন্থী নানা বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। যা গড়ায় ফুটবল ফেডারেশন পর্যন্ত।

এসবের প্রেক্ষিতে রোববারের টুইটে ওজিল বলেন, অনেক ভাবনাচিন্তার পর আমি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিতে বাধ্য হলাম। বিশ্বকাপে আমার সঙ্গে যা হয়েছে সেটার পর আর জার্মানির হয়ে খেলব না। জার্মানির বর্ণবিদ্বেষের আবহে আমার মনে হয়েছে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। এক সময় গর্ব হতো জার্মান জার্সি পরে মাঠে নামলে। এখন ছবিটা পুরো আলাদা। সিদ্ধান্তটা খুবই কঠিন। কিন্তু বিদায়বেলায় এটাই বলতে চাই, আমি সব সময় দেশের জন্য নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি।

জার্মানির হয়ে ৯২ ম্যাচ খেলেছেন। হয়েছেন পাঁচবারের বর্ষসেরা জার্মান ফুটবলার। ২০১০ বিশ্বকাপে অপরিচিত হিসাবে মাঠে নামলেও টুর্নামেন্ট শেষে ওজিল হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের সেরা তারকাদের মধ্যে একজন।

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে বিতর্কে পড়েন ওজিল। জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি) থেকে তাকে সতর্কও করা হয়।

ওজিল বলেছেন, খেলায় জিতলে তাকে বলা হতো ‘জার্মান’ আর হেরে গেলে তার পরিচয় হয়ে ওঠতো একজন অভিবাসী। মূলত জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রেইনহার্ড গ্রিন্ডেলকেই অভিযুক্ত করেছেন বিদায়ী এই ফুটবলার। অভিযোগ করেছেন অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও।

তিনি বলেন, ‘তার (ফেডারেশন সভাপতি) মতো বর্ণাবাদী মানসিকতার মানুষের উচিত নয় জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের মতো বিশ্বের অন্যতম বড় ফুটবল সংস্থার দায়িত্বে থাকা। গ্রিন্ডেল এবং তার সমর্থকদের চোখে যখন আমি ভালো খেলে জিতি তখন আমি একজন জার্মান। আর যখন হেরে যাই তখন আমি অভিবাসী।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওজিল লিখেছেন, ‘গ্রিন্ডেলের আচরণে আমি মোটেও আশ্বচর্য হইনি। কিন্তু যখন ফেডারেশনের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও আমার তুর্কি পরিচয়কে অপমান করলেন, এবং স্বার্থপরের মতো আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডায় নামলেন (তখন বুঝতে পারলাম), যথেষ্ট হয়েছে, তাদের সাথে আর নয়।’

দেশের হয়ে তার অতীত স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘অনেক গর্ব নিয়ে জার্মান জার্সিটা গায়ে দিতাম। কিন্তু এখন আর নয়। নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে (জার্মানির হয়ে) যা অর্জন করেছি ধরে নেব তা ভুলে গেছি।’

শুধু ফেডারেশন নয়, সমাজের নানা পর্যায় থেকে কেমন বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওজিল লিখেছেন, ‘খেলা শেষে (বিশ্বকাপের) এক জার্মান ভক্ত আমাকে বলেছিলো ‘তোর মতো তুর্কিকে ঘৃণা করি। শুয়োর, তোর মুখে প্রস্রাব করি।’ আরও কত ঘৃণাযুক্ত ইমেইল, হুমকি দিয়ে করা ফোন কল আর সামাজিক মাধ্যমে বাজে মন্তব্য আমি আর আমার পরিবার পেয়েছে তা নিয়ে আলাপ করতে চাই না। এসব কিছু অতীতের এক জার্মানিকে সামনে তুলে আনে, যে জার্মানিকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করতে পারিনা। আমি নিশ্চিত মুক্ত সামাজিক পরিবেশে বিশ্বাসী অনেক জার্মানও আমার সাথে একমত হবেন।’

Exit mobile version