Site icon Jamuna Television

আমার মুমূর্ষু মেয়ে শিখিয়েছে, কখনও হাল ছাড়তে নেই: ডি মারিয়া

ছবি: সংগৃহীত

২০১৪ সালে অপরিণত অবস্থায় জন্মের পরই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিল আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার আনহেল ডি মারিয়ার মেয়ে মিয়া। মৃত্যুর সাথে লড়ে স্বাভাবিক জীবনে মিয়ার ফিরে আসার ঘটনা বিশ্বকাপ জয়ী ডি মারিয়াকে পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আর এ কথা গর্বের সাথেই জানিয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনাল, কোপা আমেরিকা ফাইনাল ও লা ফিনালিসিমায় গোল করা আর্জেন্টিনার সাম্প্রতিক সাফল্যের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি আনহেল ডি মারিয়া। বলেছেন, আমার মুমূর্ষু মেয়ে শিখিয়েছে, জীবনে কখনোই হাল ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।

আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম ওলে‘কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডি মারিয়া বলেছেন, কীভাবে নিজ জীবন থেকে প্রতিনিয়ত নেয়া এসব শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা তাকে পরিণত করেছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক হিসেবে। বলেছেন, আমার মেয়ে জন্মের সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওর জন্মের এক সপ্তাহ পর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করেছিলাম ওর জন্য। সময়টা কঠিন ছিল। কারণ, আমরা সপ্তাহে মাত্র দু’দিন হাসপাতালে ওকে দেখার সুযোগ পেতাম। রাতে ওকে ছাড়াই বাসায় যেতে হতো। চলে যাওয়ার সময় জানতাম না আগামীকাল ওকে আবার দেখতে পাব কিনা।

য়্যুভেন্তাস উইঙ্গার ডি মারিয়া বলেন, আমার মেয়ে শিখিয়েছে কোনো অবস্থাতেই যেন তার উপর থেকে ভরসা না হারাই। শিখিয়েছে, কীভাবে লড়তে হবে। পরিবার, স্ত্রী ও আমার নিজের কাছেও মিয়া এক নিদর্শন; কঠিন সময়েও হাল ছেড়ে না দেয়ার শিক্ষা আমরা ওর কাছ থেকেই পাই। কত সহজেই আমরা হাল ছেড়ে দিই। নিজেদের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি! আমরা সব সময় এ কথা ভাবি যে, মিয়া তার জীবন নিয়ে কী লড়াইটাই না করেছে! ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জানাই, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মিয়া এখন অনেক ভালো আছে।

ছোট্ট একচালা টিনের ঘরে বসে বাবা বানাতেন কয়লা। এরপর এগুলো নিজে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। তারও আগে ছিল ছোটখাঁটো একটা দোকান। ডি মারিয়া’স ক্লিনিং শপ। একদিন হাঁটতে হাঁটতে দোকান থেকে বেরিয়ে রাস্তার মাঝখানে চলে যান তিনি। মা ছুটে এসে বাঁচান গাড়ির ধাক্কা থেকে। ছোটবেলায় অস্বাভাবিক রকমের চঞ্চল ছিলেন কোপা, ফিনালিসিমি ও বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করা আজকের ডি মারিয়া। চঞ্চলতা কমাতে মাত্র চার বছর বয়সে ডি মারিয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তার মা। ওর দৌড় না থামার গল্প শুনে ডাক্তার বললেন ফুটবল খেলতে দিন। শুরু হয় ডি মারিয়ার ফুটবল ক্যারিয়ার।

২০১১ সালে আর্জেন্টাইন হোর্হেলিনা কারদুসোকে বিয়ে করেন ডি মারিয়া। এর দুই বছর পর ডি মারিয়ার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তার মেয়ে মিয়া। কিন্তু তারপরই জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। তবে ঐ একই সময়ে জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটাও পেয়েছেন ডি মারিয়া। সে প্রসঙ্গে এই আর্জেন্টাইন বলেন, আমার মেয়ে প্রায় মরেই যেত। ৩০ শতাংশ সম্ভাবনা ছিল বেঁচে থাকার। কিন্তু সে লড়াই করেছে। আমি যখন ভাবি, জাতীয় দল ছাড়লে কীভাবে থাকবো কিংবা চোটে পড়লে কীভাবে খেলবো, তখন মেয়ের সেই লড়াই আমাকে প্রেরণা জোগায়। আমি বুঝি, কখনও হাল ছাড়তে নেই।

ডি মারিয়ার মেয়ে মিয়া ভূমিষ্ঠ হয়েছিল সময়ের আগেই। বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণ থেকে শেষ পর্যন্ত মেয়েকে ফিরে পান ডি মারিয়া। আজ মেয়ের কাছে বাবা হয়তো তার আইডল। তবে নিজের অজান্তেই ডি মারিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় আইডল বনে গেছেন ছোট্ট মিয়া।

/এম ই

Exit mobile version