Site icon Jamuna Television

সরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ বছরে ৫-৬ লাখ!

ফাইল ছবি

আখলাকুস সাফা:

ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে সরকারি হাসপাতালেই বছরে খরচ রোগী প্রতি অন্তত ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা! ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতেই চলে যায় কমবেশি দেড় লাখ টাকা! জরিপ বলছে, চিকিৎসার খরচ মেটাতে রোগীদের ২৯ শতাংশই নিজেদের ভিটেমাটি-সম্পত্তি বিক্রি করেন। বেশিরভাগের তাও নেই, তাই ধারকর্জ করেন তারা। সুদের বোঝা টানতে হয় পরিবারের অন্যদের। স্বাস্থ্য অর্থনীতি গবেষকদের পর্যবেক্ষণ- ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ কমানোর চেয়ে শুধু ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি আর ওষুধ কেনা প্রকল্পেই আগ্রহ বেশি; এমন কিছু অসাধু কর্মকর্তার লোভেই ফল দিচ্ছে না সরকারের ভর্তুকি।

কুষ্টিয়ার আনোয়ার হোসেন ভুগছেন টেস্টিকুলার ক্যান্সারে। স্বল্প খরচে চিকিৎসা করাতে তিনি আসেন রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। এখানেও তার খরচ হয়েছে ৬ মাসে ৪ লাখ টাকা! ক্যান্সার শনাক্তের পর দেশে চলে আসেন প্রবাসী শ্রমিক রিপন মিয়া। বেসরকারিতে চিকিৎসায় ১৩ মাসে খরচ হয়ে গেছে ১৭ লাখ টাকা। সম্বল ফুরিয়ে এখন তিনি সরকারিতে।

জানা গেছে, সরকারি পর্যায়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে শুধুমাত্র ক্যান্সার শনাক্ত করতেই। ১৭ বা ২১ দিন পরপর কেমো বা রেডিওথেরাপিতেই লেগে যায় ২৫ হাজার করে। তার আগে টেস্ট, পরে ওষুধে চলে যায় আরও হাজার ১৫ হাজার।

অসহায় পরিবারগুলো কি করে মেটাচ্ছে এতো চিকিৎসার খরচ? এ নিয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। যার ফল- সম্পত্তি বিক্রি করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন রোগীদের ২৯ ভাগ। ধারকর্জ করে থেরাপি চালিয়ে যাচ্ছেন ৩৯ ভাগ রোগী, যাদের ২২ ভাগ ঋণের সুদ টানতে গিয়ে আরও অসহায়। বাকিরা ভেঙ্গেছেন নিজেদের সঞ্চয়, বেচে দিয়েছেন নিজের ব্যবসাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ছয় মাসে তাদের অ্যাভারেজ খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অনেকের ৬ মাসেই খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এটা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষদের জন্য একটা বড় ধাক্কা।

ক্যান্সারের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়াদেরও নানা পর্যায়ে দ্বারস্থ হতে হয় অন্য হাসপাতালের। থেরাপিতে থাকা সবারই অন্তত ২ বার লাগে- পেট সিটি স্ক্যান। যার খরচ ৮০ হাজার, সিরিয়াল পেতে পেরিয়ে যায় মাস!

জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক জানালেন, আমাদের মোটামুটি সবগুলো কেমোথেরাপি অ্যাভেইলেবল থাকে। মাঝেমাঝে দুই একটা কম পড়লে হয়তো বাইরে থেকে নিতে হয়। ভারতে যেটার খরচ ২০ হাজারের মতো সেটা আমাদের দেশে ৩০ হাজারের মতো হয়েই যায়।

গবেষক অধ্যাপক হামিদ অবশ্য মনে করেন, যন্ত্রপাতি আর অবকাঠামোর চেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনাটা ঠিকঠাক করলেও খরচ কমানো সম্ভব। যা করা যাচ্ছে না স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির জন্য। অথচ ক্যান্সার চিকিৎসায় বিভিন্ন পর্যায়ে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, যার সুফল সে অর্থে মোটেও পাচ্ছেন না ক্যান্সার রোগী বা তাদের পরিবারগুলো। বিশ্লেষকদের পরামর্শ, যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে তা দেশেই তৈরি হয়। সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তা কিনে নিচ্ছে। এ ওষুধ সরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি তৈরি করা যায় তাহলে ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ অনেকটাই কমে আসবে।

/এসএইচ

Exit mobile version