Site icon Jamuna Television

সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একমাত্র বোনকে একঘরে করলো ৫ ভাই, সন্তানসহ হাসপাতালে শামা

মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শামা।

আশিক মাহমুদ:

পাঁচ ভাইয়ের একটি মাত্র বোন। ভাইদের একজন বিসিএস কর্মকর্তা, একজন কানাডা প্রবাসী। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিও আছে যথেষ্ট। এতো কিছুর পরও যেনো কিছুই নেই। প্রায় ১৫ দিন নিজ ফ্ল্যাটে দুই সন্তান নিয়ে অনাহারে মৃত্যুর দিন গুনছিলেন আফিফা শামা নামের এক নারী। স্রেফ ভাগ্যের জোরে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি শামা ও তার দুই সন্তান।

গত রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে শামা এবং তার দুই যমজ মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পৃথিবীতে কেউ কি নেই তাদের? এছাড়া ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাট থাকতেও কেনো এমন নির্মম জীবন তাদের?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে যমুনা নিউজ। উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, শামা ছিলেন তার আইনজীবী বাবার সবচেয়ে আদরের সন্তান। ২০১২ সালে বেশ ধুমধাম করে বিয়েও হয়েছিল তার। কিন্তু সন্তানসম্ভাবা হওয়ার পরই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার। পরে যজম দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা-মার বাসায় ভালোই চলছিল তাদের দিনকাল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় তিন বছর আগে, শামার বাবা মারা যাওয়ার পর।

বাবার মৃত্যুর পর সম্পদ নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। তাদের মধ্যে সম্পর্ক এতোটাই তিক্ততায় পৌছায় যে, মুখ দেখাদেখিও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। বাবার সম্পদের অংশ থেকে শামা ও তার সন্তানদের প্রতিমাসের খরচ দেয়ার কথা থাকলেও তা বন্ধ করে দেন দুই ভাই। এতে অনেকটা মনোকষ্টেই ঘরবন্দি হয়েছিলেন শামা।

এই নারীর ৫ ভাইয়ের মধ্যে অপর তিন ভাইও প্রতিষ্ঠিত। সবারই ঢাকায় ফ্ল্যাট, গাড়ি আছে। অবাক করা বিষয় হলো, যে ভাইকে (বিএসএস কর্মকর্তা) কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন তিনি, সে ভাই কখনও খবর রাখেননি তার। বরং বঞ্চিত করেছেন সবকিছু থেকেই।

গত ৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন শামা ও তার দুই সস্তান। এরমধ্যে শামা এখন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন। আর তার দুই সন্তান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি। এ সময় এক ভাই ছাড়া হাসপাতালে আসেননি আর কেউ-ই। এমনকি তার বিসিএস কর্মকর্তা ভাই আব্দুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় যমুনা নিউজও। তাছাড়াও এ বিষয় নিয়ে পরিবারের অন্য কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাননি।

মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর থেকেই ওই নারী ও তার দুই সন্তানের সব কিছু দেখভাল করছে পারি ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন। পারি ফাউন্ডেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াসিম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, উদ্ধারের পর উনি রাগে-ক্ষোভে বলতেন, ‘আমার কেউ নাই’। আর বাচ্চাগুলোর চুলে উকুন হয়েছিল; আর জট লেগে গেছে বলে চুল ফেলে দেয়া হয়েছে। উনাদের অবস্থা অনুযায়ী আমরা ওনাদের সেবা দিচ্ছি।

শামার চিকিৎসার প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, যখন একটা মানুষের ইলেক্ট্রোলাইটিং ব্যালেন্স থাকে, তখনই আসলে মানসিক ব্যালেন্সটাও থাকে। আমরা বুঝতে পারছি যে, তার সাইকিয়াট্রিক সমস্যা আছে। আমরা তার হিস্ট্রিও নিয়েছি। কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে সাইকিয়াট্রিক মেডিকেশনে যাচ্ছি না। রোগীকে সুস্থ করার পরে আমরা সাইকিয়াট্রিস্ট আনবো। কারণ, এই সময়টা উনার জন্য খুবই কঠিন।

পুলিশ বলছে, সম্পত্তি নিয়ে ভাই-ভাইয়ের বিবাদই কাল হয়েছে শামার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা (পূর্ব) থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আড়াই কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় চাল-বিদ্যুৎ-মোবাইল নাই, ব্যাংক একাউন্টেও তার কোনো টাকা নাই। আবার এই পরিবেশে দুইটা বাচ্চা, ওদের লেখাপড়া বন্ধ, এটা আসলে অবিশ্বাস্য। প্রত্যেক ভাই যদি প্রতি মাসে অল্প করে টাকা দেয় তাহলেও হয়ে যায়। এটা একটা বীভৎস ব্যাপার।

/এসএইচ/এমএন

Exit mobile version