Site icon Jamuna Television

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে প্রাণহানি ছাড়াবে ৪০ হাজার, জাতিসংঘের শঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে প্রাণহানি ছাড়াবে ৪০ হাজার। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুর্গত এলাকা পরিদর্শনের পর এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, স্বজন হারানোদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ-হতাশা-উদ্বেগ। তাদের অভিযোগ, সপ্তম দিনেও বহু এলাকায় পৌঁছায়নি উদ্ধার ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম। দুর্বল অবকাঠামো নীতিমালা নিয়েও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। খবর আল জাজিরার।

সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী কোনো ঘরেই থামছে না আর্তনাদ। সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে লাশের সারি। কোনো ঘরে হয়তো আদরের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিদায় নিয়েছে। কাউকে উদ্ধারের পর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার স্বজনদের। চারিদিকে অসংখ্য মরদেহ থাকলেও নেই দাফনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা। তাই, দুর্গত এলাকার প্রত্যেক শহরে গণকবর খুড়ছে প্রশাসন। তাদের দাবি, দিন শেষ হওয়ার আগেই ৮০০ থেকে ১০০০ লাশ দাফন করা হচ্ছে। ফুরসত পাচ্ছেন না জানাজা পড়ানো ব্যক্তিরাও। এক স্থানীয় বলেন, আমার মেয়ে, তার স্বামী আর ৩ নাতি নাতনি- সবাই মারা গেছে। আর, আমরা বুড়োবুড়ি তাদের লাশ উদ্ধারের অপেক্ষায় বসে আছি। আল্লাহ এটাই দেখার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

এরইমধ্যে, ভবন নির্মাণ নীতিমালা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা উঠে এসেছে আলোচনায়। ১১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তুর্কি প্রশাসন। আটক করেছে ১২ কন্ট্রাক্টরকে। স্বজন হারানো পরিবারগুলোর দাবি, ৭ দিন পেরোলেও, পৌঁছাচ্ছে না জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম। নেই ন্যুনতম চিকিৎসা ব্যবস্থাও। সে কারণে, উদ্ধারের পরও বাঁচানো যাচ্ছে না বহু মানুষকে।

সাধারণ মানুষ ভবন নির্মাণের নীতিমালা নিয়ে অভিযোগে বলেছে, বাড়িগুলোয় কনক্রিট নেই, শুধু বালুতে ভর্তি। এ কারণেই, ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কায় সব ভেঙেচুরে গেছে। এই ভবনটা ৬ তলা, ২৪টা ফ্ল্যাট। দেড় শতাধিক মানুষ বসবাস করতেন। অথচ, মাত্র তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। মা-ভাইদের ধ্বংসস্তুপ থেকে খালি হাতে টেনে বের করেছি। পরিবারের বাকি সদস্যরা এখনও আটকে আছে। গেলো ৭ দিনে কোনো উদ্ধার সরঞ্জাম আসেনি। দয়া করে, জরুরি যন্ত্রপাতি পাঠান।

ছবি: সংগৃহীত

এ পরিস্থিতিতে, জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দ্বিগুণ হবে প্রাণহানির সংখ্যা। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদে উদ্ধারকাজ পরিচালনার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, গেলো ১০০ বছরের মধ্যে এতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখেনি এই অঞ্চল। প্রাণহানির সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়াতে পারে। সে কারণেই, আগামী ৩ মাস সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবে জাতিসংঘ।

দুর্গত অবস্থা পরিদর্শনের পর ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, হৃদয়বিদারক। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ অঞ্চলটির বাসিন্দাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ট্রমা। আমরা ত্রাণ, জরুরি চিকিৎসা ও উদ্ধার সরঞ্জাম পাঠানো অব্যাহত রেখেছি। আগামী ৬ মাস অঞ্চলটিতে কাজ করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

গেলো সোমবার, ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর তুরস্ক-সিরিয়ায় অনুভূত হয়েছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি আফটার শক। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক মাস এমনকি বছরজুড়ে হতে পারে মৃদু ও মাঝারি পাল্লার কম্পন। এতে ভয়াবহ দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপে ভাইকে আগলে রাখেন ৭ বছর বয়সী বোন; জিনান ও আব্দোর চিকিৎসা চলছে

/এম ই

Exit mobile version