Site icon Jamuna Television

মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারও মানুষের ভিড়, সর্বত্র বাংলা ব্যবহারের তাগিদ

১৪৪ ধারা ভাঙতে আমতলায় সমাবেশ। এরপর দলে দলে বেরিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা; তারপর লাঠিচার্জের শিকার হয়ে গণগ্রেফতার। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলন রুখতে শেষ পর্যন্ত গুলি চালিয়ে রাজপথ রক্তাক্ত করে পাকিস্তানি পুলিশ।

ভাষার জন্য যারা লড়াই করে শহীদ হয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে মধ্যরাতের নীরবতা ভেঙে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভিড় করেন হাজারও মানুষ। একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে মরিয়া হয়ে ছুটে চলা মানুষের ঢল যেন মনে করিয়ে দেয়, সেই আগুন ঝরা ফাগুনের টগবগে আবেগ। তাদের কন্ঠে, ভাই হারা একুশের গান, কৃতজ্ঞ চিত্তে হাতে হৃদয়পুস্প। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ভাষাশহীদদের প্রতি এই গভীর ভালোবাসা যেন চির অমলিন।

শ্রদ্ধা জনাতে আসা এক তরুণী বললেন, শহীদদের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই তাদের সম্মান দেখাতে রাতেই শহীদ মিনারে এসেছি। আরেক নারী বলেন, শহীদ হওয়া ভাইদের কখনোই ভোলা যাবে না। তাদের জন্য আমরা সুন্দর একটি ভাষা পেয়েছি। প্রভাতফেরিতে আসা সবাই তাগিদ দেন, সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের।

মায়ের বুলি বাংলাকে আঁকড়ে ধরে যে পথে লুটিয়ে পড়েছিল রফিক-শফিকের দেহ, সে পথে পাদুকা নয়, নগ্ন পায়েই এগিয়ে চলে প্রভাতফেরি। মায়ের কোলে নবজাতক, বাবার কাঁধে ছোট্ট শিশু, নতুন করে বাংলাদেশ চেনা কিশোর, টগবগে রক্তের ফুলকি হয়ে উঠা যুবক, স্মৃতির পাঠাগার হয়ে উঠা বৃদ্ধ, কে নেই এই দলে? এসেছিলেন ভিনদেশি অতিথিরাও।

প্রভাতফেরির স্রোত এসে থামে শহীদ মিনারে। যাদের জন্য মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারা, যাদের রক্ত মূর্ত হয়েছিল স্বাধীনতার লাল সূর্যে; তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে মাথা। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় স্মৃতির মিনার। এভাবেই সঞ্চারিত হয় দেশপ্রেম, নতুন প্রত্যয়।

সকলের বিশ্বাস বাঙালির জীবন থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আলাদা করার কোনো শক্তি কারও নেই। যতদিন বাঙালি স্বত্তা পৃথিবীর বুকে বিরাজ করবে, যতদিন বাংলা ভাষায় মা কথা বলতে শেখাবেন, ততদিন অমলিন রবে একুশে ফেব্রুয়ারির আবেদন। নতুন প্রজন্মই অমলিন রাখবে প্রভাতফেরি।

/এমএন

Exit mobile version