কুড়িগ্রামের সরকারি অফিসগুলোয় সময়মতো উপস্থিত থাকেন না বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী

|

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কর্মঘণ্টার তোয়াক্কা না করে কুড়িগ্রামে ইচ্ছে মতো চলছে সরকারি অফিস। ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুই দফায় পরিপত্র জারি করে সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে থাকার বাধ্যবাধকতা জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু নজরদারি আর জবাবদিহিতার অভাবে চিড় ধরেছে সে নিয়মে। নির্দিষ্ট সময়ে বেশিরভাগ কর্মকর্তা আর কর্মচারী হাজির হচ্ছেন না দফতরে। এতে ভোগান্তি হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ধীরগতি দেখা দিচ্ছে সরকারি কাজে।

১৯ ফেব্রুয়ারি। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। ঘড়ির কাটা বলছে সরকারি অফিসের কর্মঘণ্টা শুরু। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে দু-একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আর অফিস সহকারী ছাড়া কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত নেই। সকাল প্রায় সাড়ে ৯টা বেজে গেলেও কার্যালয়ে উপস্থিত হননি খোদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার!

তার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সেখানে কর্মরত একজন কর্মচারী বলেন, ইউএনও স্যার কেনো আসছেন না তা আমি সঠিক জানি না। উনি কুড়িগ্রামে গেছেন নাকি বাসায় আছেন তা আমার জানা নেই।

পাশেই উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। পৌনে ১০টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ অফিস। আলো জ্বলছে তখনও, বৈদ্যুতিক সব সরঞ্জাম সচল। দু একজন কর্মচারী এসেছেন কিন্তু, বড়কর্তারা গরহাজির। একই চিত্র উপজেলা কৃষি বিভাগ, সমবায়, মৎস্য বিভাগ, শিক্ষাঅফিস, যুবউন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, রেজিস্ট্রি অফিসসহ অন্যান্য সরকারী সব অফিসে। সবখানেই কর্মচারীদের দাবি, বড় স্যার আছেন কিন্তু অফিসে নেই।

তিনি কোথায়?- জানতে চাইলে অফিসে উপস্থিত একাধিক কর্মচারী একেকরকমের উত্তর দিলেন। মূল বক্তব্য-এরা কেউই জানেন না তাদের বড় অফিসার কোথায়।

অথচ, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে একাধিকবার প্রজ্ঞাপন জারি করে সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে নিয়মিত হাজির হওয়ার থাকার নির্দেশনা আছে। একইসাথে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রথম ৪০ মিনিট নিজ কক্ষে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তারপরও অফিসে হাজির করা যাচ্ছে না ফিল্ড অফিসাদের।

কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী ওয়াসিম আতহার এ প্রসঙ্গে বলেন, অফিসিয়াল স্টাফ যারা তারা মোটামুটি চলে এসেছেন। আর ফিল্ড স্টাফ যারা তারা আমাকে রিপোর্ট করে ফিল্ডে চলে গেছেন। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের লোকেরাও সময়মতোই চলে আসেন, আজকে হয়তো কোনো কারণে দেরি হয়েছে।

এসব নিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার ১২টার মধ্যে অফিস ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেন। কেউ যান দূরের জেলায়। পরের কর্মদিবস রোববার হওয়ায় দেরিতে পৌছান অফিসে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন ও মনিটরিং জোরদারের কথা জানালেন জেলা প্রশাসক।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক। এই সময়টায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন অফিসে উপস্থিত থাকেন সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করবো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের যে টিএনটি ফোনগুলো সেগুলো ঠিক করিয়েছি। মনিটরিংয়ের আওতায় আনার জন্য আমরা এসব কার্যক্রম চালু করেছি।

প্রসঙ্গত, সময়মতো অফিসে হাজির না হওয়া এবং কর্মঘণ্টা অনুসরণ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নাগরিকরা। একইসাথে সরকারি কাজেও দেখা দিচ্ছে ধীরগতি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply