Site icon Jamuna Television

রাশিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কতটা ধ্বংসাত্মক?

ছবি: সংগৃহীত

প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ অনেক প্রাচীন একটি পদ্ধতি। আদিকাল থেকেই শোষণের জন্য যেমন যুদ্ধ চাপানো হয়েছে তেমনি অধিকার আদায়ের সংগ্রামও ডেকে এনেছে যুদ্ধ। তবে সময়ের সাথে সাথে যুদ্ধের ধরন ও সরঞ্জামে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আদিতে যুদ্ধ হতো হাতে হাতে। মানব সভ্যতা আগানোর সাথে সাথে অস্ত্রের আবির্ভাব। ছুরি, তলোয়ারই ছিল প্রধান অস্ত্র। পরবর্তীতে পশুর সাহায্য নেয়া শুরু করে মানুষ। হাতি-ঘোড়া ছাপিয়ে ব্যালিস্টিক মিসাইলের বাস্তবতায় মানব সভ্যতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে আন্তঃমহাদেশীয় এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের অনেকে রাশান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে মনে করছেন, পুতিনই বাঁধিয়ে দিতে পারেন পারমাণবিক যুদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিজের পারমাণবিক অস্ত্রের ইউনিটকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। সুপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে সব ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের স্কোয়াডকে আরও শক্তিশালী করার ঘোষণাও দেন তিনি। এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আশঙ্কা, আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করতে পারেন পুতিন। 

যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিয়ে এত শঙ্কা, আলোচনা সেটি কীভাবে কাজ করে, তার শক্তিমত্তাই বা কতটুকু?

মিলিটারি টুডে’র প্রতিবেদনে বলা হয়, আইসিবিএম হলো রকেট চালিত ক্ষেপণাস্ত্র। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপের পর তা উঠে যায় মহাকাশে। এরপর ক্ষেপণাস্ত্রটি আবার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে লক্ষ্যবস্তুর দিকে নেমে আসে। এতে পারমাণবিক বা রাসায়নিক ওয়ারহেড যুক্ত করা হয়।

নিক্ষেপ করার পর ক্ষেপণাস্ত্রটি সোজা উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যায় মহাশূন্যে। এতে একাধিক রকেট যুক্ত করা যায়। প্রথম রকেটের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে তা মূল ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় রকেটটি জ্বলতে শুরু করে। এভাবে একটি আইসিবিএমে তিনটি পর্যন্ত রকেট যুক্ত করা যায়।

মহাশূন্যে পৌঁছে মাধ্যাকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ক্ষেপণাস্ত্রটি। এরপর আবার তা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুর ওপর নেমে আসতে শুরু করে। পারমাণবিক বোমা যুক্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্র চোখের নিমেষেই ধ্বংস করে ফেলতে পারবে বিশ্বের যেকোনো শহর।

আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র ৩ হাজার ৫০০ মাইল পর্যন্ত দূরে সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি যেকোনো ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। শক্তির দিক থেকে ‘আইসিবিএম’ কে বিশ্বের সবথেকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য এই মিসাইল বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশের কাছে আছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কাছেও আছে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য এই মিসাইল।

মার্কিন বিজ্ঞানীদের জরিপ ও গবেষণা বলছে, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে রাশিয়ার কাছেই। যার মধ্যে ১ হাজার ১৮৫টিই ব্যালিস্টিক মিসাইল। সিএনএন।

প্রায় সব দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করে। সারা বিশ্বের যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম এই মিসাইল। ব্যালিস্টিক মিসাইলের ক্ষমতা এমন ভয়াবহ যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমাতে ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে এটি কয়েকশ’ গুণ বেশি ধ্বংস করতে সক্ষম।

/এনএএস

Exit mobile version