Site icon Jamuna Television

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: বাবার ছবি হাতে ৪ সন্তানের অপেক্ষা

স্টাফ করেসপনডেন্ট, নেত্রকোণা:

সাত বছরের শিশু ত্রাণফি। বাবার ছবি বুকে ধরে অপেক্ষা করছে। কখন বাড়ি ফিরে আসবেন। ‘মা’ বলে ডেকে কোলে তুলে নিবেন। কিন্তু ছোট্ট ত্রাণফি হয়তো এখনো বুঝতে শেখেনি বাবা আর ফিরে আসবে না কোনোদিনই। সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ নিয়ে গেছে তার বাবাকে।

শিশু ত্রাণফির পাশে বসে স্বামীর লাশের অপেক্ষা করছেন স্ত্রী কাজলী ঘাগ্রা (৩৮)। সাথে বাবার লাশের অপেক্ষায় ছেলে তিন ছেলে প্রীতম ঘাগ্রা (১৯), প্রতীক ঘাগ্রা (১৫) ও প্রতিম ঘাগ্রা (১২)। বড়রা বুঝলেও শিশু ত্রাণফি কিছুতেই তা মানতে চাইছে না তার বাবা মারা গেছেন। সে বার বার বলছে আজ রোববার বাবা বাড়িতে আসবে।

শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণে মারা যান শ্রমিক রতন নকরেক (৪৫)। তিনি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ছোট মনগড়া গ্রামের ক্ষিতীশ রংদীর ছেলে। বড় পরিবার কিন্তু উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রতন একাই। তাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান গোটা পরিবার।

রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা বসে আছেন। কেউ কাঁদছেন, কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তখনো রতনের মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি। স্বামী হারানোর শোকে স্ত্রী কাজলী ঘাগ্রার আহাজারিতে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

নিহত রতনের বোন প্রীতিলতা নকরেক বলেন, ২৫ বছর ধরে রতন ওই অক্সিজেন প্লান্টে শ্রমিকের কাজ করছিল। গত সপ্তাহে সে চাকুরি ছেড়ে দিয়েছিল। ৫ দিন পর আবারও জয়েন করে। এটাই যেন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। রতন ছাড়া তার পরিবারে আর কেউ উপার্জন করে না। শ্রমিকের কাজ করে সে যে টাকা পায়; তা দিয়েই সংসার চালনাসহ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চলতো। একমাত্র উপার্জনক্ষম অভিভাবক মারা যাওয়ায় তার সন্তানদের লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলো।

জানা গেছে, নিহত রতনের বড় ছেলে প্রীতম এবার এইচএসসি পাশ করেছে, মেজো ছেলে প্রতীক এসএসসি পরীক্ষার্থী, সেজো ছেলে প্রতিম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছোট্ট মেয়ে ত্রাণফি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

নেত্রকোণার কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। দুর্ঘটনায় নিহত রতনের মরদেহ এখনো এলাকায় পৌঁছেনি।

এএআর/

Exit mobile version