Site icon Jamuna Television

নারী, তোমায় দেখেই পৃথিবী চিনবে বাংলাদেশ

ফারহানা ন্যান্সি:

“তুমি উজাড় করা মমতা/ তুমি জননী, তুমি তরুণী/ প্রেমের হিমাদ্রী তুমি, অঢেল ভরসা/আগলে রাখো আমাদের সকাল-রাত্রির যাপিত জীবন…।”

সময়টা পাল্টেছে। এখন পুরো বিশ্বের সামনে নিজের দেশকে মাথা উঁচু করে প্রতিষ্ঠিত করেন তারা। নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা ছাদখোলা বাসের উদ্দীপ্ত মেয়েদের ছবি। তাদের গল্পে সমাজের কালো আর পিছিয়ে থাকার ভাবনা যেমন উঠে আসে তেমনি নারীর ভেতরের অপ্রতিরোধ্য শক্তির চিত্রও দেখা যায়।

কুষ্টিয়ার কন্যা নীলা। দূরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সমাজের কুটক্তি পায়ে ঢেলে। তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল প্রভাবশালী সমাজপতিরা। কিন্তু সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ কী আর, বালির বাধ দিয়ে আটকো যায়! সব বাধা তুচ্ছ করে, আপন লক্ষ্য পানে ছুটছে নির্ভীক নীলা। জাতীয় ফুটবল দলের এই খেলোয়াড় বলেন, পাড়া-প্রতিবেশিরা অনেক কথা বলতো যে, অন্যান্য মেয়েরা কেমন হয় আর আমি কেমন। তাদের মেয়েদের আমার সাথে খেলতে দিতো না। কারণ, আমি নাকি খারাপ হয়ে যাচ্ছি। তাদের মেয়েরা যেন খারাপ না হয়।

কলসিন্দুরের তহুরা বুক ফুলিয়ে যেন সবাইকে জানান দিচ্ছেন, বিয়ে সমাচারের চেয়েও জরুরি কাজ আছে করবার মতো। পায়ের বুটের কৌশলে ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ, আর লাখো-কোটি বাঙালির উল্লাসই তার কাছে মহৎ। তহুরা বলেন, আমার বাবা-মাকে অনেকেই বলতো, মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলে, শর্ট প্যান্ট পরে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও অনেকে অনেক কথা বলতো। আমার ইচ্ছাশক্তিতেই আমি এ পর্যন্ত এসেছি।

জননী, জায়া, কন্যা, প্রেয়সী- পরিচয়ের শেষ নেই এই বঙ্গ নারীদের। সমাজ চায় তাদের ওপর কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ। আর কলসিন্দুরের মেয়েরা যেন গাইছে এ শিকলকে বিকল করে দেয়ার গান। তাদের আক্রমণাত্মক খেলায় স্বপ্ন দেখছে মানুষ। আশার আগমনী ধ্বনি কম্পন ধরাচ্ছে চারপাশে। বিশ্ব দরবারে দেশকে সম্মানের আসনে অধিষ্টিতকারীরাই তো সত্যিকারের বিজয়ী!

জাতীয় দলের ফুটবলার নীলা বলেন, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় নারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা দরকার। যাতে, নারীর ক্ষমতায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ তারা করতে পারে। আমাদের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের সবগুলোই যেন পূর্ণ হয়।

তহুরা বলেন, গ্রামে এখন সবাই আমাকে চেনে, মেসি বলে ডাকে। সবার কাছ থেকেই আদর পাই। এসব ভালো লাগে যে, আগের মতো অবস্থা আর নেই। আগে কেউ চিনতো না, জানতো না। এখন সবাই চেনে।

কোথায় নেই নারীর বিচরণ, নারী-পুরুষের একত্রে পথচলা? আগের চেয়ে নারীর অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে ইতিবাচকভাবে। তহুরা-নীলা-সানজিদারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে আশা জাগানিয়া স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত এখনও কোথাও না কোথাও কোনো না কোনোভাবে নারী পারিবারিক সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হয়েই যাচ্ছে। তাই নারী দিবসের উদযাপনকে কি পূর্ণরূপে সার্থক বলার সময় এসেছে?

/এম ই

Exit mobile version