Site icon Jamuna Television

মুক্তি পেলেন ১২শ’ জীবন রক্ষা করা হোটেল রুয়ান্ডার ‘নায়ক’

ছবি: সংগৃহীত

রুয়ান্ডায় সংগঠিত গণহত্যায় বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন সাবেক হোটেল ম্যানেজার পল রুসেসাবাগিনা। তার নায়কোচিত ভূমিকাকে উপজীব্য করে তৈরি হয়েছিল হলিউডের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘হোটেল রুয়ান্ডা’। রুয়ান্ডা সরকারের কঠোর এই সমালোচককে দুই বছর আগে একটি ‘প্রহসনমূলক’ বিচারের মাধ্যমে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। সাজা কমিয়ে গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) কিগালির কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে পল রুসেসাবাগিনাকে। খবর বিবিসির।

ছবি: সংগৃহীত

রুয়ান্ডা সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের আদেশে রুসেসাবাগিনার সাজার মেয়াদ পরিবর্তিত হয়েছে। রুসেসাবাগিনার কারামুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি ‘আনন্দঘন ফলাফল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, পলের পরিবার তাকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছে। এই পরিবারের আনন্দ আমিও ভাগাভাগি করতে চাই।

৬৮ বছর বয়সী পল রুসেসাবাগিনাকে রুয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় প্রায় ১২শ’ মানুষের জীবন বাঁচানোর কৃতিত্ব দেয়া হয়। কাতারের মধ্যস্থতায় তাকে মুক্তি দিতে কয়েক বছর ধরে কূটনৈতিক চাপ এবং আলোচনা হয়েছে। এই চাপের অধিকাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, যেখানে ২০০৯ সাল থেকে বসবাস করতেন রুসেসাবাগিনা। তার পরিবার জানায়, স্থায়ী ঠিকানা টেক্সাস থেকে রুয়ান্ডায় ফেরার জন্য পল কাগামে সরকার রুসেসাবাগিনাকে নিরাপত্তা প্রদানসহ বিভিন্ন ব্যাপারে প্রলুব্ধ করে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে রুয়ান্ডায় ফেরেন রুসেসাবাগিনা।

ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডা ছেড়েছিলেন পল রুসেসাবাগিনা। প্রায় এক দশক ধরেই তার বীরত্বের কথা বহির্বিশ্বের কাছে ছিল অজানা। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ট্যাক্সি চালক হিসেবেও বেশ কিছুদিন কাটাতে হয়েছে তাকে। এরপর ১৯৯৮ সালে রুয়ান্ডা জেনোসাইড নিয়ে বই লেখেন সাংবাদিক ফিলিপ গোরেভিচ। কিন্তু ২০০৪ সালে হলিউডের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘হোটেল রুয়ান্ডা’ তাকে এনে দেয় বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। পল রুসেসাবাগিনার চরিত্রে অভিনয় করেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা ডন চিডলে।

ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে প্রায় ১০০ দিন যাবত রুয়ান্ডায় চলে নারকীয় গণহত্যা। হুতু সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থীদের হাতে প্রাণ হারায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ। যার অধিকাংশই তুতসি সম্প্রদায়ের। সে সময় একটি হোটেলে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিতে আসে প্রায় ১২শ’ মানুষ। হোটেলটিতে ম্যানেজারের কাজ করা পল রুসেসাবাগিনা চলমান সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচান এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন।

পরের বছর জর্জ ডব্লিউ বুশ সরকার রুসেসাবাগিনাকে এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অব ফ্রিডম। এরপর রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের চাঁছাছোলা সমালোচকে পরিণত হন রুসেসাবাগিনা। ২০১৮ সালে একটি ভিডিওবার্তায় রুসেসাবাগিনা বলেন, রুয়ান্ডার শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। যেকোনো মূল্যে রুয়ান্ডার ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত

রুসেসাবাগিনার সমর্থকরা জানায়, ২০২০ সালে একটি প্রাইভেট জেটে করে বুরুন্ডি যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সেখানে না গিয়ে জেটটি অবতরণ করে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ‘প্রহসনমূলক’ বিচারে রুসেসাবাগিনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বলা হয়, রুয়ান্ডায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংগঠিত দুইটি সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত বিদ্রোহী গ্রুপকে সহায়তা দিয়েছেন রুসেসাবাগিনা।

রুয়ান্ডা সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, শাস্তির মেয়াদ পরিবর্তনের অর্থ নিয়ে কারো মধ্যেই বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণেই তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই ইস্যুতে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরিতে মার্কিন সরকারের গঠনমূলক ভূমিকা ওই কাতার রাষ্ট্রের সহায়তা রুয়ান্ডা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রেখেছে।

/এম ই

Exit mobile version