Site icon Jamuna Television

নতুন বাবা-মা পেলো পিতৃ পরিচয়হীন নবজাতক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে জন্ম নেয়া পিতৃহীন স্বাধীনের নতুন ঠিকানা হলো নিঃসন্তানহীন এক দম্পতি। নিঃসন্তানহীন মমিনুল ইসলাম (৩৫) ও মৌসুমি আক্তার (৩০) এই নবজাতকের দায়িত্ব নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজ হাতে শিশুকে কোলে নিয়ে সন্তানহীন এই দম্পতির কাছে তুলে দেন। আর মানসিক ভারসাম্যহীন নাসিমা বেগমের দায়িত্ব নেন মৌসুমি আক্তারের পিতা রিকশাচালক সৈয়দ আলী। স্বাধীনকে তার নতুন বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেবার সময় ১০০ ডলারের একটি নোট তুলে দেন জেলা প্রশাসক।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম আমিনুল ইসলাম, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম আনোয়ারুল হক প্রামানিক, ইউএনও ফুলবাড়ি দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু।

সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের দিনমজুর মমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার শিশুটিকে পেয়ে আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, দশ বছর হলো আমাদের সংসারে কোন সন্তান নেই। মা ডাক শুনার জন্য এই শিশুটিকে সন্তান হিসেবে দত্তক নেবার আগ্রহ প্রকাশ করি। শিশুটিকে নেবার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। এসময় এই দম্পতি সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।

সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, গত ৮ আগষ্ট বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মানসিক ভারসাম্যহীন নাসিমা বেগম। খবর পেয়ে শিশুটিকে দেখতে সদর হাসপাতালে আসেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। তিনি কোলে নিয়ে আদর করে শিশুটির নাম রাখেন ‘স্বাধীন’। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক এই নবজাতক ও মায়ের দায়িত্ব নেন। অনেকেই শিশুটির দায়িত্ব নিতে চাইলেও মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর দায়িত্ব নিয়ে রাজি হয়নি। পরবর্তিতে মমিনুল ও মৌসুমি নামের দম্পতি বাচ্চা ও তার মায়ের দায়িত্ব নেয়ায় জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে শিশু ও তার মাকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.শাহিনুর ইসলাম সরদার বলেন, ‘গত ২৭ জুলাই হাসপাতালের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে অসুস্থ অবস্থায় ছটফট করতে দেখেন কুড়িগ্রাম প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি জাহানুর রহমান খোকন। তিনি লোকজনের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পর পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা যায় মহিলাটি গর্ভবতী। পরে তাকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, একজন মা হিসেবেই আমি স্বাধীনের দায়িত্ব নিয়েছি। শিশুটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আল্লাহ যদি আমায় বাচিঁয়ে রাখেন আমি যে প্রান্তেই থাকি স্বাধীনের খোঁজখবর নিবো। ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তি স্বাধীনের খবর পেয়ে একটি অটোরিক্সা দিয়েছে। যা দু’একদিনের মধ্যেই পরিবারের হাতে তুলে দেবো।

Exit mobile version