মারিয়া হোসেন:
‘কালবেলা’য় বিদায় ‘কালপুরুষ’ এর। যে হাত এক সময় অনিমেষ-মাধবীলতার গল্প বুনেছে, তৈরি করেছে ‘সাতকাহন’, সেই হাত আর কলম ধরবে না। তৈরি হবে না আর কোনো ‘বুনোহাঁস’। তাদের স্রষ্টা যে এখন না ফেরার দেশে। সকল বাঙালি পাঠকদের কাঁদিয়ে চিরঘুমে শায়িত সমরেশ মজুমদার। তিনি নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি। বইয়ের মলাট থেকে চলচ্চিত্রেও সরব পদপচারণা ছিল এ কিংবদন্তির।
সমরেশ সিনেমা তৈরি করেননি। তবে তার লেখা উপন্যাস আর গল্প নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচালক সিনেমা তৈরি করেছেন, তৈরি করেছেন টিভি ধারাবাহিকও। সাহিত্য জগত তো আছেই, চলচ্চিত্র জগতও আজ হারিয়ে ফেলেছেন তাদের স্রষ্টাকে।
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের লেখনী উঠে এসেছে সিনেমাজগতেও। তার কালজয়ী উপন্যাস ‘কালবেলা’ অবলম্বনে সিনেমা তৈরি করেছিলেন প্রখ্যাত নির্মাতা গৌতম ঘোষ। ২০০৯ সালে তৈরি সেই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন- পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকারা।
অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় পর্দায় আসে ‘বুনোহাঁস’। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন দেব, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও তনুশ্রী চক্রবর্তী। সমরেশ মজুমদারের সৃষ্ট বিখ্যাত অমল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দেব। আন্ডারওয়ার্ল্ড কাহিনীর উপর নির্মিত সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। এছাড়া তার সৃষ্ট গোয়েন্দা অর্জুন ও ‘জালবন্দী’ নিয়েও তৈরি হয় সিনেমা।
শুধু সিলভার স্ক্রিন নয়, ছোট পর্দাতেও সরব উপস্থিতি ছিল এ কথাসাহিত্যিকের। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম জনপ্রিয় সাহিত্যকেন্দ্রিক টিভি ধারাবাহিক বলতে যার নাম আসে, তা হলো সমরেশ মজুমদারের লেখা ‘তেরো পার্বণ’। যেখানে ‘গৌরব’ বা ‘গোরা’-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। ৮০’র দশকে সাড়া ফেলে দিয়েছিল সেটি।
সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘সাতকাহন’ নিয়েও তৈরি হয়েছে ধারাবাহিক। সাতকাহন’-এর প্রধান চরিত্র দীপাবলীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমী চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া এ লেখকের ‘উৎসবের রাত’ উপন্যাস থেকে ওয়েব সিরিজ করার পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছিল ২০১৯ সালে।
বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন সমরেশ মজুমদার। তার লেখা পড়েই বেড়ে উঠেছে পুরো একটি প্রজন্ম। যেখানে ছিল সহজ-সরল জীবনবোধ, প্রেম-বিরহ, রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চারের বেড়াজাল। এই কিংবদন্তির শারীরিক প্রস্থান ঘটলেও তার সৃষ্ট চরিত্ররা বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।
/এসএইচ

