Site icon Jamuna Television

রংপুরে ফুটবল খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে কলেজ ছাত্র নিহত

নিহত আশিকুর রহমান আশিক (১৮)।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

রংপুরের কাউনিয়ার ফুটবল খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে আশিকুর রহমান আশিক (১৮) নামের এক কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাং। এ ঘটনায় ১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৯ মে) রাতের এ ঘটনার পর থেকেই তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যে। সতর্ক অবস্থায় আছে স্থানীয় পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে কাউনিয়া থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ জানান, শুক্রবার বিকেলে ফুটবল খেলা নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকার আতিকুল, মামুন গ্রুপের সাথে বিরোধ হয় স্টেশন কলোনি এলাকার বাসিন্দা ও কাউনিয়া ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিকুরের। এ নিয়ে সেখানে কথা কাটাকাটি হলে উভয়পক্ষই পরস্পরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।

সন্ধ্যায় আশিক তার বন্ধুদের নিয়ে কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আতিকুল ও মামুন গ্রুপের সাথে বিরোধে জড়ায়। এসময় আতিকুল ও মামুনসহ অন্যান্যরা আশিককে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই রাত ১১টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনার খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রথমে আতিকুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় আতিকুলও আহত হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মামুনসহ অন্যান্যরা এখনও পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নিহত আশিকের মা আবেদা বেগম জানান, আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় রান্না করার সময় রিফাত নামে এক ছেলের মাধ্যমে খবর পাই যে বাসস্ট্যান্ডে মামুন ও আতিকুল আমার ছেলেকে পিটিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনি আমার ছেলেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। যারা আমার ছেলেকে মেরেছে, তাদের কি শাস্তি হবে না? শাস্তি তো দেয়ায় লাগবে। ও যেমন মারা গেছে, ওদেরকেও মারতে হবে। এটাই আমার কথা। পুলিশ যদি না মারে, থানায় আনলে আমিই মারবো। আমি নিজ হাতে ওদেরকে মারবো। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে মানুষ করছিলাম। ওরা আমার ছেলেকে শেষ করে দিলো।

নিহত আশিকের চাচাতো ভাই আলমগীর জানান, কাউনিয়ার অধিকাংশ লোকই জানে আতিকুল-মামুনসহ কিশোর গ্যাংয়ের অন্যান্য ছেলেরা সব সময় নেশার ওপরেই থাকে। তারা মাদকাসক্ত ও উচ্ছৃংখল। তারাই আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরেছে। শুধু ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করেই নয়, সামান্য ঘটনা বা মাত্র ১০ টাকা নিয়ে বিরোধের জেরেও ওদের ক্ষোভ থাকতে পারে। কারণ যারা আমার ভাইকে মেরেছে তারা সব সময় তারা নেশা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ওদেরকে আবার অনেকেই টাকা পয়সা দিয়ে পালে। তারা সিনিয়র। শুধু এদেরকেই নয়, যারা টাকা দিয়ে এদের পালে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।

নিহত আশিকের আরেক চাচাতো ভাই জনি জানান, স্থানীয় দোকানদাররা বলছেন যে মামুনসহ একদল কিশোরগ্যাং সদস্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সময় আশিক মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হয়ে ফলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিল। আর, মামুনসহ অন্যদের হাতে ছিল রড ও মোটা লাঠি। ওগুলো দিয়ে পিটিয়ে তারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। মার খেয়ে আশিক রাস্তায় পড়ে চিৎকার করেছিল। তখন কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং রাস্তায় পড়া অবস্থাতেই ৫-৭ জন মিলে আরও পিটিয়ে আমার ভাইকে মেরেছে। এখন আমি এই হত্যার বদলে হত্যা অথবা ফাঁসি চাই।

আশিকের আরেক চাচাতো ভাই সাদ্দাম হোসেন বলেন, আসলে খেলার মাঠ থেকেই এসব ক্ষোভের ঘটনা শুরু হয়। মাঠে কেউ আগে খেলতে যায়, কেউ পরে খেলতে যায়। কেউ খেলতে গিয়ে মাঠ পায় না আবার এক পক্ষ আছে যারা পরে আসাদের মাঠে নামতে দেয় না। এভাবেই ক্ষোভের সৃষ্টি। যেহেতু প্রধান আসামি ধরা পড়েছে তার কাছেই আসল ঘটনা শোনা যাবে- যে তারা ঠিক কোন ক্ষোভের বশে এই ঘটনা ঘটালো।

নাম না প্রকাশের শর্তে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানদার জানান, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমিষের মধ্যে ঘটনাটা ঘটিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা পালিয়ে গেলো। কেউ এগিয়ে আসার সময়ও পেলো না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সবাই চিহ্নিত। এরা প্রত্যেকে মাদকাসক্ত ও ‘সিনিয়রদের’ ছত্রছায়ায় থাকে। এদের ব্যপারে পুলিশও জানে।

এ ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। উঠতি বয়সিদের মধ্যে বিরোধের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে এর নেপথ্যে আরও কী কী আছে।

প্রসঙ্গত, নিহত আশিক কাউনিয়া ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার বাবা তফেল উদ্দিন রাজমিস্ত্রীর পাশাপাশি কৃষি কাজ করতেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আশিক ছিলেন দ্বিতীয়।

/এসএইচ

Exit mobile version