Site icon Jamuna Television

চার বছর পর আত্মসাৎকৃত শিক্ষাসামগ্রী ফিরে পেল কালীগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

অবশেষে আত্মসাৎকৃত মালামাল ফিরে পেয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য অ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানুর বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার হয়। অবশেষে প্রায় চার বছর পর কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বসে ওইসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ডেকে অতি গোপনে মালামাল ফেরত দিয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসার।

এদিকে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত মালামাল ফেরত দেয়ার মাধ্যমে সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানুর (বর্তমান কর্মস্থল কুষ্টিয়ার খোকশা উপজেলা) অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি দৃশ্যত প্রমাণিত হলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ ব্যাপারে বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপকরণসমূহ বিতরণ করা হয়েছে তাদের অনেকেই ওই সময় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়সমূহে অধ্যয়নরত ছিল না।

উপজেলার কোলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সজীব ও তানজিলা নামের দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে হুইল চেয়ার, মহিষাহাটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহবুবুর রহমান, কাকলাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রীতম মিত্র, সিংদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবির হাসান, বড় শিমলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলসী রানী ও শান্তা ইসলামকে শ্রবণযন্ত্র দেয়া হয়েছে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ঢাকতে সাবেক টিও তড়িঘড়ি করে ওই টাকার মালামাল কিনে এনে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মেহেদী সোহরাব হোসাইন মালামাল বিতরণের সময় সাবেক টিওকে সহযোগিতা করেন।

এ ব্যাপারে কোলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান জানান, ১০ মে সাবেক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানু কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে বসে আমার স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত দুইটি হুইলচেয়ার প্রদান করেন। হুইল চেয়ার দুইটি নিয়ে এসে আমরা রেজিস্ট্রারে উল্লেখিত দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হাতে তুলে দিয়েছি।

কোলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সে সময়ের চতুর্থ শ্রেণির তানজিলা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার মা সুরমানী বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, তার মেয়ের জন্য সরকার হুইলচেয়ার দিলেও তা প্রায় ৪ বছর পর কয়েক দিন আগে হাতে পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ২০১৯-‘২০ অর্থবছরের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য সরকারিভাবে ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানু উক্ত বরাদ্দের টাকা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্যয় না করে ভুয়া রেজিস্ট্রার করে বিল ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন। তার এ কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মেহেদী সোহরাব হোসাইনসহায়তা করেন বলে অভিযোগ আছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাৎকারী সাবেক ওই শিক্ষা কর্মকর্তা এবং তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আজও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানুর সাথে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানান, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটা তদন্ত হয়েছে শুনেছি। খুব দ্রুত সাবেক ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএআর/

Exit mobile version