Site icon Jamuna Television

ক্যাম্প ন্যুতে বিষাদের রাগিণী; বুসকেটস, আলবা- দুই কিংবদন্তির বিদায়

ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালের ২৮ মে’র রাত বার্সেলোনা সমর্থকরা হয়তো খুব দ্রুতই ভুলে যেতে পারবে না। ক্যাম্প ন্যু থেকেই এর আগে বিদায় নিয়েছেন পেপ গার্দিওলা, জাভি, ইনিয়েস্তাদের মতো কিংবদন্তিরা। এ রাতেই সার্জিও বুসকেটস ও জর্ডি আলবাকে বার্সেলোনার জার্সিতে শেষবারের মতো দেখা গেছে, এমনটি নয়। একটি লিগ ম্যাচ ও জাপানে প্রীতি ম্যাচ এখনও বাকি। কিন্তু যে ক্যাম্প ন্যু বহু বছর ধরেই ছিল এই দুই বার্সা কিংবদন্তির ঘরবাড়ি, যেখানে তারা সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য সুন্দর মুহূর্তের; সেখানেই শেষবারের জন্য বার্সা জার্সিতে দেখা গেলো তাদের। সংস্কারের কারণে ক্যাম্প ন্যুও বেশ কয়েকদিনের জন্য চলে যাচ্ছে স্মৃতির মণিকোঠায়। ক্যাম্প ন্যুতে তাই বেজে চললো বেলাশেষের বিষাদের রাগিণী।

২০০৭-০৮ মৌসুমে বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক। এরপর একে একে ১৫ মৌসুম ধরে সার্জিও বুসকেটস ছিলেন বার্সার মাঝমাঠের কাণ্ডারি। পেপ গার্দিওলার ড্রিম টিমে জাভি ও ইনিয়েস্তাকে নিয়ে বুসকেটস গড়ে তুলেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ড ত্রয়ী। ওয়ান টাচ ফুটবল, জায়গা পরিবর্তন, টিকিটিকায় যারা কেবল তাদের ছায়া অনুসরণ করতে বাধ্য করেছিলেন প্রতিপক্ষকে। বার্সেলোনার হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড সাথে করেই যাচ্ছেন এই আইকনিক সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তারকাদ্যুতি ছিল না অন্যদের তুলনায়। মাঠেও তাকে আলাদা করে খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কের সেই বিখ্যাত উক্তি চেনাতে পারে বুসিকে- যখন খেলা দেখবে তখন বুসকেটসকে খুঁজে পাবে না। কিন্তু যখন বুসকেটসকে দেখবে, তখন পুরো খেলাই দেখতে পাবে।

বুসকেটসের চার মৌসুম পর ২০১২ সালে বার্সা মূল দলে আসেন জর্ডি আলবা। আলেহান্দ্রো বালদে দলে আসার পর থেকে খেলার সুযোগ কিছুটা কমেই গিয়েছিল তার। তবে এর মাঝে এক দশক বার্সার অবিচ্ছেদ্য অংশই হয়ে গিয়েছিলেন আলবা। মেসি থাকা পর্যন্ত লেফট ফ্ল্যাঙ্কে বল পায়ে আগুয়ান আলবা ছিলেন ভয়ঙ্কর। মেসি-আলভেজ জুটির পর মেসি-আলবা যুগলবন্দিতেও আনন্দের অসংখ্য উপলক্ষ পেয়েছে ব্লাউগ্রানারা। লেফট ব্যাক হয়েও আক্রমণাত্মক মানসিকতা আলাদা করে তুলেছিল আলবাকে। তার অ্যাসিস্টের পরিসংখ্যানও আলবাকে বিশেষ করে তুলেছে বার্সেলোনার সর্বজয়ী দলের একজন সদস্য হিসেবে।

মায়োর্কার বিরুদ্ধে এই দুই বর্ষীয়ান খেলোয়াড়ই ছিলেন বার্সার মূল একাদশে। ৭৯ মিনিটে আলবা এবং ৮৪ মিনিটে তুলে নেয়া হয় বুসকেটসকে। দুইজনই পান ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশান’, পুরো দর্শক গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে বিদায় জানান দুই ক্লাব কিংবদন্তিকে। বুসকেটসের মুখে ছিল হাসি। আর অন্যদিকে, কান্না যেন বাধ মানতে চাইছিল না আলবার।

শেষ বাঁশি বাজার পর তাদের বিদায় সংবর্ধনায় দর্শক-সমর্থকদের উদ্দেশে কথা বলেন বুসকেটস-আলবা। তার আগে, এই মৌসুমে জয় করা দু’টি ট্রফি- স্প্যানিশ সুপার কাপ ও লা লিগার ট্রফি বহন করে নিয়ে আসেন বার্সার এই দুই আইকনিক খেলোয়াড়। জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয় এই দুইজনের স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত। খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা মিলে গার্ড অব অনার প্রদান করেন বুসি ও আলবাকে।

https://twitter.com/i/status/1662987369212182528

মাইক্রোফোন হাতে ক্যাম্প ন্যুর প্রায় ৯০ হাজার দর্শক ও পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য বার্সা সমর্থকের উদ্দেশে সার্জিও বুসকেটস বলেন, আমার এই যাত্রাপথে যারা যারা সাথে ছিলেন সবাইকে ধন্যবাদ। আমি সব সময়ই এই স্টেডিয়ামে খেলার স্বপ্ন দেখে এসেছি। বিশ্বের সেরা ক্লাবের হয়ে খেলার আনন্দ, আবেগ ও গর্ব আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি বার্সার যেমন একজন সদস্য, তেমনি একজন সমর্থক। শৈশবের সকল স্বপ্ন পূরণ করেই আমি বিদায় নিচ্ছি। তবে এই চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। আমি নিশ্চিত, আমাদের আবারও দেখা হবে।

https://twitter.com/i/status/1662901131604000768

জর্ডি আলবা বলেন, যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এই জার্সি পরাটা বিশাল সম্মানের ব্যাপার। আমি সবসময়ই সবাইকে সাহায্য করতে চেয়েছি। একজন কিউলার হিসেবে আমি গর্বিত। ক্যারিয়ারে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের দিন। আজকের দিনে স্মরণ করছি প্রয়াত টিটো ভিলানোভাকে, যিনি আমাকে ২০১২ সালে এখানে নিয়ে এসেছিলেন।

এরপর প্রথাগতভাবে এই দুই কিংবদন্তিকে কিছুক্ষণ শূন্যে ছুড়ে উদযাপন করে বার্সার খেলোয়াড় ও স্টাফরা। ক্যাম্প ন্যুর চারিদিকে হয় সংক্ষিপ্ত এক ল্যাপ অব অনার। অবশেষে, বুসকেটসের ১৫ ও আলবার ১১ মৌসুমের যাত্রায় পরে গেলো সর্বোচ্চ যতিচিহ্ন। মেজর সকল ট্রফি জিতে, নিজেদের নামের পাশে অগণিত স্মৃতি জমিয়ে ক্লাবের ইতিহাসে দুইটি নামকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে ক্যাম্প ন্যুকে শেষবারের মতো বিদায় জানালেন বার্সেলোনার সোনালি প্রজন্মের শেষ দুই সদস্য, সার্জিও বুসকেটস ও জর্ডি আলবা। ইয়োহান ক্রুইফের সাজানো ক্যাথেড্রালে বাড়লো আরও দুইটি ভাস্কর্য।

/এম ই

Exit mobile version