
রিমন রহমান:
শিউলি বেগম, দুই বছর আগেও সীমিত আয়ে রাজধানীতে ভালোই চলছিল তার সংসার। নিজের ছোট্ট একটা চাকরি আর স্বামীর ক্ষুদ্র ব্যবসায় এক সন্তান নিয়ে বস্তির খুপরি ঘরে সুখের কমতি ছিল না।
কিন্তু করোনায় গেছে চাকরি, স্বামীর আয়ও হয়েছে সীমিত। এই সময়ে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুঁটছে পণ্যের দাম। অবস্থা এমন হয়েছে, দুই বেলার খাবার যোগানোটাই যেন অসাধ্যের ব্যাপার।
বাজেটে তার প্রত্যাশা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে শিউলি বেগম বলেন, খাবারে সব টাকা শেষ হয়ে যায়। এজন্য খাদ্যমূল্য যেন একটু কমায়।
একই গল্প রাজধানীর আরেক বাসিন্দা গোলাম আহমেদেরও। টানাপোড়েন আর বাজারে দামের আগুনে যেন অঙ্গার পঞ্চাশোর্ধ এই ব্যক্তি। তাকেও প্রশ্ন করা হয়, আসছে বাজেটে প্রত্যাশা কি? বাজেট এলে সবকিছুর দাম বাড়ে। আমরা চাই সবকিছুর দাম একটু কমুক। যাতে গরীবরা ঠিকমতো খেতে পারে।
যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।
শুধু শিউলি বেগম কিংবা গোলাম আহমেদ নন, পণ্যমূল্যই এই সময়ে মানুষের সবচেয়ে আতঙ্কের নাম। ব্যয়ের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না সীমিত আয়ের মানুষ। নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু মানুষের যেন স্বস্তি নেই। ২০২৩-২৪ বাজেটে স্বস্তির বার্তা চায় সাধারণ মানুষ।
এবারের বাজেটে খাদ্যপণ্যে নতুন করে কর বসছে না, উৎপাদনে ভর্তুকিও অব্যাহত রাখবে সরকার। ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমূখে’ শিরোনামে হবে এবারের বাজেট। যার মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
পণ্যের প্রকৃত যে দাম, তার চেয়ে বেশি দামে কেনার অর্থই মূল্যস্ফীতি। দুই অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই করছে অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচক। সামনের দিনে পণ্যমূল্য সহনীয় হবে, এমন আভাস মেলাও কঠিন।
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলার সংকটে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর আমদানি কমে গেছে। সেগুলোর জোগান কমে গেছে। সেটির সুবিধা ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন। পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। উৎপাদন ব্যাহত বলতে বাজারে জোগানটা ঠিকমতো হচ্ছে না। এই জোগানের অভাব যদি থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি তো থাকবেই।
এদিকে, এমন এক অবস্থায় বাজেট আসছে, শুল্ক কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, কিন্তু ডলারের উচ্চমূল্য এলোমেলো করছে সবকিছু। তারপরও বাজারে পণ্য ও সেবার সরবরাহ বাড়াবে সরকার। বাজেটে কৃষি খাতে সার, বীজ, সেচ ও যন্ত্রপাতিতে অব্যাহত থাকবে ভর্তুকি। অন্যদিকে, বাড়ানো হবে সামাজিক সুরক্ষার আওতা-ও।
ড. জাহিদ হোসেন প্রশ্ন তোলেন খাদ্যভিত্তিক কর্মসূচিতে যাওয়া নিয়ে। বলেন, আমরা কেন এই কর্মসূচিতে গেলাম? যেটা ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। এতে দুর্নীতি আছে, লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরাসরি ক্যাশ সহায়তা প্রদান করা, যেটা শুরু হয়েছিল গার্মেন্টসকর্মীদের বেতন দেয়ার মাধ্যমে। ওই ধরনের কর্মসূচিতে আমাদের যাওয়া দরকার। যাতে লিকেজটা কমে যায়। আর এখানে তো বরাদ্ধ আরও বাড়াতে হবে।
এদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার তদারকির ব্যর্থতায় বাড়ছে দাম। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে মিলবে স্বস্তি?
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কম দামে চাল, এক কোটি কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বা অর্ধমূল্যে বিভিন্ন পণ্য দেয়া হচ্ছে। ভ্যাট মওকুপ করা হয়েছে। আমদানির ট্যাক্স বাদ দেয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা আরও সহজে যাতে নানা পণ্য পেতে পারে, এজন্য বাজেটে সংস্থান থাকবে।
এছাড়া, সরকারি চাকরিজীবিদের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়বে বেতন। আর বেসরকারি চাকরিজীবিদের খরচের সঙ্গে আপস করা ছাড়া বিকল্প নেই।
/এমএন



Leave a reply